‘কিনবার আইছি রুই-কাতল, পাঙ্গাশ কিন্ন্যা বাড়িত যাইতাছি’

‘কিনবার আইছি রুই-কাতল। আয়্যা দেহি দাম আকাশছোঁয়া। সাধ থাকলেও এইতা মাছ কিনবার সাধ্য নাই। এর লাইগ্যা পাঙ্গাশ কিন্ন্যা বাড়িত যাইতাছি।’
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজারে মাছ কিনতে এসে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ। তিনি নগরীর একটি এনজিওতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করেন।
আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। মাছ, সবজিসহ সবধরনের নিত্যপণ্য তিনিই কেনাকাটা করেন। সবজির দামে সন্তুষ্ট থাকলেও মাছের দামে ক্ষুব্ধ তিনি। তিন কেজি রুই কিংবা কাতলা কিনে বাড়ি ফেরার চিন্তা করলেও এসে দেখেন মাঝারি আকারের এসব মাছের দাম ২৬০ টাকা কেজি। দেশীয় ছোট মাছের দামও বেশি। তাই তুলনামূলক কম দাম পেয়ে ৩৬০ টাকা দিয়ে তিন কেজি পাঙাশ কিনেছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এইডা কোনো কথা অইলো? বাজারে মাছের অভাব নাই। তবুও দাম বেশি। আমগোর মতো আয়ের লোকজনের বাজার সদাই করতে খুব কষ্ট অই। দাম কমলে আমরা শান্তি পাইতাম।’
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিউটি খাতুন। তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘সবজি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন অসন্তুষ্ট। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। দুই ছেলেমেয়ে ছোট। তাই বাধ্য হয়ে আমিই সবকিছু কেনাকাটা করি। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের বেতন বাড়ে না। বর্তমান সরকারকে দাম কমানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’
বাজার ঘুরে জানা যায়, গত সপ্তাহ যেসব রুই ও কাতলা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। মাঝারি ও বড় আকারের অন্যান্য মাছের দামও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন আকারের বাউশ ২৮০-৩১০, মৃগেল ২১০-২৪০, পাঙাশ ১২০-১৪০, দেশি পুঁটি ১৮০-২০০, পাবদা ২০০-২৫০ ও তেলাপিয়া ১৩০-১৮০, ট্যাংরা ৩০০-৩৯০, শোল ৫০০-৫৫০, শিং ৪০০-৪৬০, টাকি ৩৫০-৪০০, রাজপুঁটি ১৫০-১৮০ ও দুই কেজি ওজনের সিলভার কার্প ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দাম স্থিতিশীল থেকে টমেটো ২০, কাঁচামরিচ ৪০, শসা ৩০, মটরশুঁটি ৫০, বরবটি ৫০, বেগুন ২০, করলা ৪০, মুলা ১০ ও মিষ্টিকুমড়া ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে গাজরের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫ ও শিম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরলতি পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। তবে বাঁধাকপি ১৫ ও ফুলকপি ১০ টাকা পিস, ডাঁটা ও লেবু ১৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। কমেছে লাউয়ের দাম। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৪০ টাকা পিসের লাউ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। অপরিবর্তিত অবস্থার সোনালি ৩০০, লেয়ার ৩৫০, সাদা কক ২৮০ ও লাল কক ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজিবিক্রেতা আব্দুল হাকিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবজির দাম প্রতিদিন ওঠানামা করে। গত এক সপ্তাহ ধরে কয়েকটি সবজির দাম ওঠানামা করেছে। তবে সবজি কিনতে এসে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকায় ক্রেতারা স্বস্তিতে রয়েছেন। বাজারে প্রচুর সবজি রয়েছে।’
পাঙাশ মাছ বিক্রেতা ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘রুই, কাতলাসহ অন্যান্য মাছের চেয়ে পাঙাশের দাম অনেক কম। দুই কেজির রুই মাছের টাকা দিয়ে চার কেজির বেশি পাঙাশ মাছ কেনা যায়। তাই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন পাঙাশ কিনতে ভিড় করেন।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। তবুও অনেক ব্যবসায়ী নানা অজুহাতে ক্রেতাদের ঠকাতে চেষ্টা করেন। নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান চালানো হবে।
এসআর/এএসএম