রোয়ানু : বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের জীবনযাত্রা


প্রকাশিত: ০৮:২৭ এএম, ২০ মে ২০১৬

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট নিম্মচাপে গত দু’দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত শহর ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা। শুক্রবার সারাদিন চট্টগ্রামে কখনো ভারি আবার কখনো হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে দেশের সকল সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার সকল উপজেলায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। কমেছে দূর পাল্লার যান চলাচলও। বিভিন্ন এলাকায় যে যেখানে আছেন সেখানেই নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হাসানুর রশিদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল থেকে কিছুটা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে সাগরের পশ্চিম মধ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল।

গত ২৪ ঘন্টায় ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার এগিয়েছে। তবে এর গতি অনেকটাই কম। বর্তমান গতি অব্যহত থাকলে এটি বাংলাদেশ উপকূলে আসতে আরো দু’দিন লাগবে।

তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।  
 
ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, রোয়ানু হয়তো প্রলয়ঙ্করী হয়ে ওঠার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে না, তবে প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে পাহাড়ি ঢল, আকষ্মিক বন্যা ও ভূমিধসের কারণ ঘটাতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৩৪ দশমিক ৪ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শুক্রবার সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কমেছে তাপমাত্রা, এতে শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, স্বর্দি, জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামের সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি আপাতত বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি বাতিলের কথা জানান কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে সম্ভাব্য সবধরনের প্রস্তুতি। এরই অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপকূলীয় উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।  ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটির পাশাপাশি সকল উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫।

জীবন মুছা/এমএমজেড/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।