রাস্তা বানাতে শতাধিক তাল ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেললেন আ’লীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৬ জুন ২০২৩

পটুয়াখালীর বাউফলে একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে ওই রাস্তার দুই পাশের পরিবেশবান্ধব প্রায় দেড় শতাধিক তালগাছ ও খেজুরগাছ ভেকু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাউফল সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জৌতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিশেষ বরাদ্দ থেকে ওই গ্রামের আনছার বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ইসমাইল ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত দুই হাজার ৫০০ ফুট (প্রায় ১ কিলোমিটার) রাস্তা নির্মাণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ১৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার সরকারি মূল্য পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সেই সড়ক নির্মাণ করতে গিয়েই গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করছেন।

সোমবার (৫ জুন) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশের ৯২টি ছোট-বড় তালগাছ ও ৫১টি খেজুর গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো রাস্তার পাশে পড়ে আছে। উপড়ে ফেলা ফলন্ত তালগাছ থেকে কয়েকজন শিশু ও কিশোর তাল কেটে শাঁস খাচ্ছে। উপড়ে ফেলা বেশিরভাগ খেজুরগাছ ছিল ফলন্ত।

স্থানীয়রা বলছেন, শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটা হলে গাছগুলো উপড়ে ফেলা লাগতো না। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটায় গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো পরিবেশবান্ধব ছিল। পথচারীদের ছায়া দিতো।

এ বিষেয় জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা বলেন, ‘কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে রাস্তার মধ্যে থাকা কিছু তালগাছ ও খেজুরগাছ কাটা হয়েছে।’

রাস্তা বানাতে শতাধিক তাল ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেললেন আ’লীগ নেতা

বাউফল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন,‘ বিষয়টি আমি জানি না। তবে কোনোভাবেই রাস্তার পাশের পরিবেশবান্ধব তালগাছ ও খেজুরগাছ কাটা যাবে না। আমি সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেবো।’

বাউফল উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘আমার জানামতে সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা কাজটি করেছেন। রাস্তাটি স্থানীয় এমপির বিশেষ বরাদ্দ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। তাকে রাস্তা করতে বলা হয়েছে, গাছ কাটতে বলা হয়নি।’

উপজেলা বন কর্মকতা বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘তালগাছ ও খেজুরগাছ কাটার বিধান নেই। একান্ত প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাটতে হবে। আমার জানামতে এখানে গাছ কাটার কোনো অনুমোদন নেই।’

রাস্তা বানাতে শতাধিক তাল ও খেজুরগাছ উপড়ে ফেললেন আ’লীগ নেতা

পটুয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে আমাদের উপজেলায় যিনি দায়িত্বে রয়েছেন তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেনেছি। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত মে মাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের সময় অন্তত ৩০টি তালগাছ উপড়ে ফেলার ঘটনায় মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলু গাজী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সোবহান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

আব্দুস সালাম আরিফ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।