স্তব্ধ মানুষের বিবেক আর মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করেছে নাঈম

আকরামুল ইসলাম
আকরামুল ইসলাম আকরামুল ইসলাম সাতক্ষিরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:৪৬ এএম, ৩০ মার্চ ২০১৯

শিশু নাঈম। বসবাস রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। হাজারো মানুষের ভিড়ে ব্যতিক্রম দশ বছর বয়সী এ শিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে শিশু নাঈম। ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর পানি ছিদ্র পাইপ দিয়ে বেরিয়ে নষ্ট হচ্ছে। আর এ ঘটনাটি শিশু নাঈমের বিবেককে জাগ্রত করে। পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে মানবিকতার নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করে।

আগুনে আবন্ধ মানুষদের বাঁচানোর যুদ্ধে পরিত্যক্ত পলিথিনই নাঈমের অস্ত্র। চোঁখের সামনে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পানি নষ্ট হতে দিতে চাইনি নাঈম। আগুন নেভানোর এক ফোঁটা পানিও যেন নষ্ট না হয় সেজন্য পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত এক টুকরো পলিথিন দিয়েই শুরু হয় নাঈমের মানবিকতার যুদ্ধ। এমনি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে অনলাইন দুনিয়ায়। ছবিতে শিশু নাঈমের চোখে-মুখে চিন্তা, চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।

শিশু নাঈমের এমন কর্মকাণ্ডের ছবিটি প্রকাশের পর প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের। স্যালুট জানিয়ে নিজের মতো করে সকলে তার এ কাজের প্রশংসা করছেন। ভাইরাল হওয়ার পর নাঈম তার এ কর্মকাণ্ডের সরাসরি জবাব দিয়েছে মিডিয়ায়। সেখানে নাঈম জানিয়েছে, যখন দেখি ছিদ্র দিয়ে পানি বেরিয়ে নষ্ট হচ্ছে তখন এক ফোঁটা পানিও যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তখন আমি সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসি। পাশে থাকা পরিত্যক্ত পলিথিনের টুকরো ছিদ্র মুখে চেপে ধরি।

নাঈমের বাবা ডাব বিক্রি করেন, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। নাঈম লেখাপড়া করে পঞ্চম শ্রেণিতে। মানুষদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টার ঘটনার স্পষ্টভাষায় ব্যাখ্যাও দেয় শিশু নাঈম। শিশু হলেও ভুলে যায়নি অগ্নিকাণ্ডের সময় মানুষদের প্রাণ বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টার কথাও। নাঈম জানায়, মানুষকে বাঁচাতে আগুন নেভানোর পানি নষ্ট হতে দিতে চাইনি। পানি নষ্ট না হলে অনেকের জীবন বেঁচে যাবে।

বড় হয়ে মানুষের সেবা করার জন্য পুলিশ অফিসার হতে চায় বলেও জানায় নাঈম। এর আগেও এমন মানবিক কাজে গুলশানে অংশ নিলে সেখানে নাঈমকে টাকা দেয়া হলে সে টাকা নেয়নি। টাকা না নেয়ার কারণ হিসেবে নাঈম জানায়, টাকা নিলে সকলে বলবে আমি ঘুষ নিয়েছি তাই নেয়নি। সমাজের সেক্টরে সেক্টরে যখন ঘুষ আর দুর্নীতির আখড়া, প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে জীবন্ত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় কেউ কেউ, তখন শিশু নাঈমের এমন আচরণ আর মানবিকতার গল্প নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায়।

বিলাসী আর আয়েশি পরিবেশে জন্ম হয়নি নাঈমের। বস্তিতে বড় হওয়া দশ বছর বয়সী ছেলেটি বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে একদিকে যেমন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে, অন্যদিকে স্বব্ধ মানুষের বিবেক আর মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করেছে অনেকগুণ। মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর শিশু নাঈমের লেখাপড়ার দায়িত্বসহ পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। যদিও নাঈম আগেই মিডিয়ায় জানিয়েছিল, তার পুরস্কার পাবার কোনো ইচ্ছা নেই বা চাই না।

পথভ্রষ্ট মানুষদের পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য অল্প বয়সী নাঈমই যেন মানুষদের চোখ খুলে দিল। প্রতিটি ঘরে ঘরে শিশু নাঈমের মতো এমন মানবিক শিশুর জন্ম হোক। তবেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ।

এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।