শিগগির জাকসু নির্বাচন চায় শিবির, ছাত্রদল সংস্কারের পরে

সৈকত ইসলাম সৈকত ইসলাম , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
ছাত্র-শিক্ষক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)

ছাত্র-শিক্ষক সংঘর্ষ কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। এরপর দীর্ঘ ৩২ বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি জাকসু। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশ সংস্কারের পাশাপাশি সংস্কার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। এ সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরইমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচনের রোডম্যাপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রণীত নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে নির্বাচন ঘিরে ছাত্র নেতাদের মধ্যে মতের ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। জাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্র নেতাদের কে কী ভাবছেন তা জানার চেষ্টা করেছে জাগো নিউজ।

বিজ্ঞাপন

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির মতে সিট বাণিজ্য, দখলদারত্ব, অছাত্ররা হলে থাকা বিষয়গুলো স্থায়ীভাবে দূর করার জন্যও জাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।

জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবি উঠেছে। কিন্তু বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাকসুর প্রতিনিধিরাই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে পারবেন। তাই আগে জাকসু নির্বাচন হওয়া জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে ছাত্রদল। সংগঠনটির জাবি শাখার আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর এ বিষয়ে বলেন, ‘জাকসুতে আমাদের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ছাত্রদল এরইমধ্যে উপাচার্য বরাবর পাঁচটি যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক সংস্কার দাবি জানিয়েছে। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পূর্ণ করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে।’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের দাবি জানান ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সবচেয়ে যৌক্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংসদ। অথচ আমরা দেখেছি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দেশের ছাত্র সংসদগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ছাত্র সংসদ অকার্যকর রাখা মানে দেশের নেতৃত্ব তৈরিতে বাধা দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, জাকসুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আমেজ সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করি।

গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের অহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, জাকসুর নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক চর্চায় অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এটি ছাত্রদের ঐক্য এবং নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ফলে ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসমাজের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর জাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মতামত বা দাবিগুলো সঠিকভাবে প্রশাসনের কাছেট তুলে ধরার মতো কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। সিনেট-সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নেই। একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞাপন

জাকসু নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্রে কিছু সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায়।

তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র সংস্কার মানে যে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি উদ্যোগী হয় তাহলে তফসিল ঘোষণার আগেই একটি কমিটি গঠন করে গঠনতন্ত্র সংস্কার সম্ভব।

জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, সংস্কারের নামে জাকসু নির্বাচনে কালক্ষেপণের পক্ষে নই। বরং বর্তমান রোডম্যাপ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সৈকত ইসলাম/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।