বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের তোড়জোড় আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের, উদ্দেশ্য কী
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তকে পাস কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে শিক্ষক সমিতি নির্বাচন আয়োজন চেষ্টার লক্ষ্য করা গেছে।
বৃহম্পতিবার (২ জানুয়ারি) বেশিরভাগ শিক্ষকের অগোচরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে নানা বিতর্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গঠিত কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক আমির শরীফ। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বর্তমান কার্যকরী সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদ ইসলাম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের বিপুল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হওয়ায় এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশিরভাগ শিক্ষকই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৮০ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। এরমধ্যে নীল দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। এছাড়া প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুটি গ্রুপে আরও ৯০ জন শিক্ষক রয়েছেন। নীল দল ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একটি অংশ বিগত প্রশাসনের সঙ্গে থাকায় এই দুই অংশের নেতারা অনেকটাই অস্বস্তিতে রয়েছেন। অনেকেই গা ডাকা দিয়েছেন। তবে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আরেকটি অংশ শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয় গেছে।
শিক্ষকদের আশঙ্কা, এবারের নির্বাচনে বিনা ভোটেই নির্বাচিত হবেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের এই অংশ। নির্বাচিত হয়েই বর্তমান প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন তারা। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের প্রশাসন থেকে দূরে সরানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
নির্বাচনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নীল দলের সভাপতি ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিতাই কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আপাতত ভাবছি না। দেখা যাক সামনে কী করা যায়।’
রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত (হল প্রভোস্ট) শিক্ষক হয়েও প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়া প্রসঙ্গে আমির শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির যারা ছিলেন তারাই আমাকে দায়িত্বটি দিয়েছেন। আর শিক্ষক সমিতি রাজনীতিমুক্ত, এটা গঠনতন্ত্রে বলাই আছে। রাজনীতি কোনো ইস্যু না। আমি এখনো কাজ শুরু করিনি।’
তড়িঘড়ি করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে আওয়ামী শিক্ষকদের ক্ষমতায় আনার জন্য পাতানো নির্বাচন আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেরোবির সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক সমিতির নামে কোনো ধরনের লেজুড়বৃত্তিকতা কিংবা আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন এই ক্যাম্পাসে ঠাঁই হবে না। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বপ্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তা নাহলে আমরা আন্দোলনে নামতে হবো।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, শিক্ষক সমিতিতো একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিএনপিপন্থি শিক্ষক ফেরদৌস রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যেখানে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্বাচন করছে না, সেখানে আমাদের নির্বাচন কীভাবে হয়? বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী দোসররা এখনো রয়ে গেছে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনোভাবেই এরা ফিরে আসতে না পারে। এরা ফিরে এলে শহীদ আবু সাইদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু আমাদের এখানে কোনো গঠনতন্ত্র নেই, এজন্য আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফারহান সাদিক সাজু/এসআর/এএসএম