৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে ১ মাসের মধ্যে রূপরেখা প্রণয়নের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৫

অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকীকরণ এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে চার মাসের পরিবর্তে ১ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। যদিও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এই দীর্ঘ সময়সীমা যৌক্তিকতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত চার মাসে সরকারের বিভিন্ন মহলে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে একমত যে সাত কলেজ ইন্টারমিডিয়েট পর্যায় রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে এই কলেজগুলোর ৭টি পৃথক ক্যাম্পাসে অনার্স ও মাস্টার্স কার্যক্রম চলছে। ফলে নতুন অবকাঠামোরও প্রয়োজন নেই বা থাকলেও তা অতি সামান্য।

তিনি বলেন, এর আগে সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি ৬ সপ্তাহ সময় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যে প্রতিবেদনটি নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দেওয়ার কথা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় আমরা শিক্ষার্থীরা নবগঠিত কমিটিকে দীর্ঘ ৪ মাস সময় দেওয়া অতিরঞ্জিত বলে মনে করছি। আমরা নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ৩০ কার্যদিবস অর্থাৎ ১ মাসের মধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রজ্ঞাপন জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কার্যপরিধি ২ নম্বরে উল্লেখ আছে ৭টি কলেজের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও বিকল্পসমূহ বিবেচনা করা। এই সমকক্ষ শব্দটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। আমরা বারংবার বলে এসেছি যে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আর কোনো প্রকার পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ফাঁদে পা দেবে না। সমকক্ষ কিংবা এ জাতীয় সংশয়মূলক কোনো শব্দ শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে না।

যেহেতু কার্যপরিধি২-এ সমকক্ষ কিংবা বিকল্পের কথা উল্লেখ আছে, সেহেতু আমরা মনে করি এ কমিটির স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সাতটি কলেজের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করতে তাদের কোনো বাঁধা নেই।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মন্ত্রণালয়ের গঠিত এই বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমেই নতুন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোডম্যাপ তৈরি করা সম্ভব হবে। যার মাধ্যমে সাত কলেজ চিরমুক্তি পাবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তির এ আন্দোলন গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। ঢাকা কলেজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা প্রথমবারের মতো সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের সংকট ও সমস্যার চিত্র তুলে ধরি। সমস্যা সমাধানে আমরা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।

তিনি বলেন, দাবি আদায়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বমহলের সমর্থন আমরা পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আমরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেছি। শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাকা কলেজে এসে সাত কলেজকে অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দেওয়ার জন্য হাইভোল্টেজ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর আমরা রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত
করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাই।

তিনি বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা বিকল্প কোনো সমাধান চায় না। আরও সহজ ভাষায় বললে এর বাইরে কোনো কার্যকর বা উপযুক্ত সমাধানও নেই। এখন যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে এ কমিটির সদিচ্ছা থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব। আর যদি এক মাসের বেশি সময় নেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধীরগতিকে কালক্ষেপণ হিসেবে ধরে নেবে।

তিনি বলেন, আমরা আর নতুন কোনো ধরনের ছলচাতুরি দেখতে চাই না। এ কমিটির মাধ্যমে যদি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল না ঘটে আমরা ফের পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেবে আসতে বাধ্য হবো।

এনএস/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।