বেরোবিতে ছাত্র আন্দোলন
প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি, নাম নেই জড়িত অনেকের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে সশস্ত্র হামলাকারী বেশিরভাগের নামই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের শাস্তির ধরন নির্ধারণে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে ছিলেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমির শরীফ। সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মাত্র দুইজন শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ হামলাকারী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম উল্লেখ না করায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিনের বিভিন্ন মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিতি প্রমাণ পাওয়া গেছে। হাতে এসেছে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও। যেখানে দেখা গেছে, কিছু ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
গণিত বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন, সাবেক ভিসির পিএ ও নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার শাহিন মিয়া ওরফে শাহিন সর্দার, পেনশন শাখার উপ-পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর নুরুজ্জামান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে কর্মচারী বিপ্লব,বহিষ্কৃত সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলাম, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুম খান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মচারী ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহবুবার রহমান, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মচারী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম মিয়া, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার হাফিজ আল আসাদ রুবেল, মার্কেটিং বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর আহসান হাবীব তুষার, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সেশন অফিসার এ কে এম রাহিমুল ইসলাম দিপু, প্রক্টর অফিসের কর্মচারী মো. আপেল, সংস্থাপন শাখা-১ এর কর্মচারী সবুজ মিয়াসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ছাত্রলীগ ও পুলিশের পাশে দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম মিয়াকে। শিক্ষার্থীদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে একটি বড় ইট ধরা অবস্থায় তাকে দেখা গেছে।
বহিষ্কৃত তুফানের পাশে সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশের হাতেও একটি লাঠি দেখা গেছে। তাদের একটু পরে হেলমেট মাথায় ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুল ইসলাম অবস্থা করতে দেখা যায়। একাধিক ছবিতে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা গেছে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে।
জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা কিছু ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে ১১ জুলাই মিছিলে বাধা দিতে দেখা গেছে সাবেক উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) ও নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে। তিনি রংপুর সদরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনেকের নাম অন্তর্ভুক্তি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা বলতে পারবো না। এটা তদন্ত কমিটি ভালো বলতে পারবে।’
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তদন্ত চলমান। অনেক নাম নতুন করে যুক্ত হয়েছে। পরে সিন্ডিকেট সভায় তাদের নাম প্রস্তাব করা হবে। যারা অপরাধী তারা শাস্তি পাবে, যারা নিরপরাধ তারা মুক্তি পাবে।’
ফারহান সাদিক সাজু/এসআর/জেআইএম