৪৬ বছরে মাত্র ১৯ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম ইবি

মুনজুরুল ইসলাম
মুনজুরুল ইসলাম মুনজুরুল ইসলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

পূর্ণাঙ্গ আবাসন সুবিধার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ৪৬ বছর আগে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে ২২ ও ২৪ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ নানা সমস্যা নিয়ে মেসে থাকছেন তারা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বেগ পোহাতে হয়। নির্ভরশীল থাকতে হয় পরিবহনের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ হাজার ৩৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট আটটি আবাসিক হলের আসন সংখ্যা তিন হাজার ৩৫৫, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ছাত্রের জন্য পাঁচটি হলে আসন সংখ্যা দুই হাজার ২০টি। বাকি ছয় হাজার ছাত্রীর জন্য তিনটি হলে আসন এক হাজার ৩৩৫টি। এর মধ্যে ছাত্র হলগুলোর সিট রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট মেলে না বলে অভিযোগ আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাগজে-কলমে আবাসিকতা পেলেও সিটে উঠতে পারেননি অনেকে।

৪৬ বছরে মাত্র ১৯ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম ইবি

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলে থাকার সুযোগ না পেয়ে নানা ঝুঁকি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সত্ত্বেও বিভিন্ন মেস ও বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়ছেন ছাত্রীরা। অন্য সমস্যাগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে থাকতে হয় তাদের। গোসলখানায় আপত্তিকর ভিডিও ধারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের হয়রানির শিকার হচ্ছেন মেসে থাকা ছাত্রীরা। মেসে থাকা ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় ও মেস মালিকদের মারামারির ঘটনাও ঘটে।

জানা যায়, আসন সংকটের জন্য হলগুলোতে রয়েছে গণরুম। এসব কক্ষে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকছেন। ছাত্রী হলগুলোতে এই সংখ্যা বেশি। খালেদা জিয়া হলে ৩৯৬টি আসন থাকলেও হলটিতে সাত শতাধিক ছাত্রী অবস্থান করতে দেখা গেছে। হলটির বড় হলরুমে একসঙ্গে ৮০ জনের বেশি ছাত্রী থাকেন বলে জানা গেছে। অন্য দুটি ছাত্রী হলের চিত্রও একই। চারজনের কক্ষে ১৬ জন করে থাকছেন। এতে পড়ালেখা ও প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

৪৬ বছরে মাত্র ১৯ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম ইবি

খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, অর্গানোগ্রামের পূর্ণ আবাসিকতার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সে বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুই বিভাগ খোলায় এই আবাসন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আসনসংখ্যা কম হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেককে গণরুমে রাখতে হয়েছে। এতে আবার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমাদের কাজ হলের যে আসন আছে সেটি ব্যবস্থাপনা করা। আবাসন সুবিধা বাড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ। তাই আগামী দিনে গণরুম প্রথা বাতিল বিষয়ে কাজ করছি। সংকট কমাতে নতুন হল প্রয়োজন।

উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের দূরের জেলা শহরে থাকতে হচ্ছে। পরিবহন নির্ভরতার কারণে অনেক সময়ও নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সরকার যদি পরিবহনে যে পরিমাণ খরচ হয় পাঁচ বছরের খরচ একসঙ্গে দেয়, সেই অর্থে কয়েকটি আবাসিক হল করা যেতে পারে। যাতে আবাসন সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।’

৪৬ বছরে মাত্র ১৯ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম ইবি

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আমরা পূর্ণ আবাসন সুবিধার লক্ষ্যে কাজ করছি। আটটি হল রয়েছে, আরও চারটি নতুন দশ তলা হল হচ্ছে। পাশাপাশি একটি ছাত্র হলের একাংশ নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। তখন সংকট অনেকটা কেটে যাবে। এরপরও কীভাবে আরও সুবিধা বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করবো।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।