স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে গ্রাফিতি আঁকলেন ৭ কলেজ শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ক্যাম্পাসগুলোতে গ্রাফিতি এঁকেছেন সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে অধিভুক্তি বাতিলের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ছবি ও স্লোগান স্থান পেয়েছে৷
রোববার (২৭ আগস্ট) অধিভুক্ত সাতটি কলেজের মূল ফটক, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে এসব গ্রাফিতি আঁকতে দেখা গেছে।
এছাড়া সোমবার একই দাবিতে বিভাগভিত্তিক গণসংযোগ এবং তার পরদিন মঙ্গলবার ঢাকা কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলন করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাত কলেজ স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যোগ্যতা রাখে৷ শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও শিক্ষার মানের কোনো উন্নতি হয়নি, উল্টো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে৷
আরও পড়ুন
- স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ
- অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
- সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এখন চাকরিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে
তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে৷
সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন আব্দুর রহমান বলেন, সাত কলেজের এসব সমস্যা নিরসনে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এখানে প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি ও দায়িত্বে অসামঞ্জস্যতা আছে। আর এসব সংকট সমাধানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করছে।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের দাবি হচ্ছে সাতটি কলেজকে নিয়ে আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে। সেজন্য আমরা তিন দফা দাবিও জানিয়েছি। দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আমাদের আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রোববার সাত কলেজে গ্রাফিতি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিছুদিন পর হয়তো সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি শব্দ দুটিতে ক্যাম্পাস ছেয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা এবার আর দমে যাবে না। দাবি আদায়ে যেখানে যেতে হয় তারা সেখানেই যাবেন। তারা মনে করছেন, সমাধান একটাই- সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি৷
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়৷
এরপর গত ২২ অক্টোবর সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। বিকেলে সায়েন্সল্যাব মোড়ে কর্মসূচি থেকে তিন দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সেদিনের মতো কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন
এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে গত শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয় গঠিত এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা৷
শিক্ষার্থীদের তিনদফা দাবিগুলো হলো—
১. অনতিবিলম্বে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন করতে হবে।
২. এই কমিশন বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করবেন।
৩. স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কোনো সেশনজট তৈরি হতে পারবে না। যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন না হবে ততদিন সেশনজট যেন না হয় সেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।
এনএস/এমকেআর