চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গণহত্যায় সমর্থন সহপাঠীর, পরীক্ষা বর্জন করলো পুরো ব্যাচ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণহত্যায় সমর্থন দেওয়া সহপাঠী পরীক্ষা দিতে আসায় পরীক্ষা বর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে প্রথম বর্ষের সমাপনীর ১০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সভাপতির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি নামের ওই ছাত্রী পরীক্ষায় বসলে অন্য শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে প্রক্টর বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট করেছিলেন ওই ছাত্রী। ফলে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাকে সেসময় বয়কট করেছিলেন।

এছাড়া তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে ব্যাচের বাকিরা পরীক্ষায় বসবেন না বলেও বিভাগকে আগেই জানিয়েছিলেন। পরবর্তীসময়ে বিভাগের শিক্ষকদের অনুরোধে ওই ছাত্রীর ক্ষমা চাওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষায় বসতে দিতে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ওই ছাত্রী ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাচের বাকি শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই তার সঙ্গে পরীক্ষা দেবেন না জানান। ফলে এদিনের ১০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিভাগ।

গণহত্যায় সমর্থন সহপাঠীর, পরীক্ষা বর্জন করলো পুরো ব্যাচ

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রনি হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভাগকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে ওই মেয়ে পরীক্ষায় বসলে আমরা পরীক্ষা বর্জন করবো। কিন্তু পরবর্তীসময়ে বিভাগের শিক্ষকদের কথায় তার ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষায় বসতে দিতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু সে কোনোভাবেই তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি। এমনকি তার আচরণ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল যে, শিক্ষকরা অনুরোধ করা সত্ত্বেও সে ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি। তাই আমরা ব্যাচের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে পরীক্ষায় বসলে আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা দেবো না।’

তবে জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী বলেন, “আমি শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলাম। আন্দোলনে অংশ নিয়ে টিয়ারগ্যাসে আহত হয়েছিলাম। হাইকোর্ট থেকে যখন কোটার রায় দেয়, তখন আমি আন্দোলন থেকে বের হয়ে পড়ি। এরপর আমি একটা পোস্ট করি—‘কোটার বিপক্ষে ছিলাম, কিন্তু এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পক্ষে না’। এই পোস্টের কারণেই আমাকে বিভাগ থেকে বয়কট করে।”

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় আমার সহপাঠীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। আমি পরীক্ষা দিতে চাই। আমি তো কোনো ক্রাইম করিনি। শিক্ষকদের কাছে আমি সবকিছু বলেছি। তারা আমাকে যথেষ্ট কো-অপারেট করেছেন, যা করেছে শিক্ষার্থীরাই করেছে। বিভাগ থেকে লিখিত আকারে যদি আমাকে পরীক্ষা দিতে না বলে, সেটা আমি গ্রহণ করবো। পরে অ্যাকশন নেবো।’

জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম বলেন, পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষার নতুন তারিখ এবং ওই ছাত্রীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিং দিয়েছি। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

আহমেদ জুনাইদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।