গণত্রাণ কর্মসূচির অডিট রিপোর্ট প্রকাশ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৩:১৫ এএম, ০২ অক্টোবর ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ কর্মসূচির অডিট রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন/জাগো নিউজ

গণত্রাণ কর্মসূচির অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক পিকেএফ ইন্টারন্যাশনালের আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্স ফার্মের অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার প্রমুখ।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ কর্মসূচির আর্থিক লেনদেন অডিট করেছে আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্স ফার্ম।প্রতিষ্ঠানটি ১০ সেপ্টেম্বর অডিট কার্যক্রম শুরু করে আজ প্রতিবেদন দিয়েছে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তহবিলে ২১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে তারা ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন। ব্যয়ের পর ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা তহবিলে অবশিষ্ট রয়েছে। এই টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজুর আর রহমান, সমন্বয়ক লুৎফর রহমান ও শিক্ষার্থী মো. ফরিদ উদ্দিনের যৌথভাবে খোলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে।

ত্রাণের ৮ কোটি যাবে পুনর্বাসনে

গণত্রাণ কর্মসূচিতে সংগৃহীত ৮ কোটি টাকা বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে হস্তান্তর করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বাকি টাকা উত্তরবঙ্গের বন্যাদুর্গত এলাকায় ব্যয় করা হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় বন্যা পুনর্বাসন কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ত্রাণ কার্যক্রম শেষ করার দিনই সংবাদ সম্মেলনে বলেছি পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করব। সে কারণে আমরা বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া অন্য যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এরপর আমরা ফিল্ড ওয়ার্ক সম্পন্ন করেছি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা অবশিষ্ট টাকা দুইভাবে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারমধ্যে ৮ কোটি টাকা আগামীকাল বুধবারের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সব জেলায় প্রতিনিধি দিয়েছি। এছাড়া আমাদের বন্যা পুনর্বাসন কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ তদারকি করবে। বাকি টাকা বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা ব্যয় করব।’

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘এত বড় একটি কার্যক্রম পরিচালনার মতো লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট আমাদের নেই। সরকারের তা রয়েছে। তারাও আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। ঢাকাস্থ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বন্যাদুর্গত স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব।’

টাকা অবশিষ্টের কারণ কী?

ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি আর্থিক হিসাব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে মোট ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা আয় ও ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয়। সে হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। কিন্তু অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবশিষ্ট রয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।

অবশিষ্ট টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পূর্বের হিসাব ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে টাকা এসেছে, যেগুলো অডিটে যোগ হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো চেক এসেছিল যেগুলো আমরা ক্যাশ করাতে পারিনি। সেগুলো ক্যাশ করার পর এখানে যুক্ত করা হয়েছে। অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চেক দিয়েছেন, কিন্তু তখনও এই নামে আমাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এছাড়া অনেকে গয়না দিয়েছেন, যেগুলো আমরা বিক্রি করে টাকা পেয়েছি। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের পর থেকে যাওয়া কার্টন এবং অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির টাকা যোগ হয়েছে। এছাড়া এক বস্তার মতো কয়েন ছিল, যেখানে প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এগুলো আগে গণনা করা যায়নি। এসব কারণে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ৩০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাকাউন্ট না থাকায় আমরা সেটি তুলতে পারিনি।’

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা চাইলে শুরুতেই একটি অডিট রিপোর্ট করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বচ্ছতা নিরূপণ করা যেত না। আমরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অডিট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সময় নিয়ে কাজটি করে আজ প্রতিবেদন দিয়েছেন।’

এমএইচএ/এমএইচআর/এমএমএআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।