পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ ফেরত পেতে শেকৃবিতে মানববন্ধন
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষণা মাঠ ফেরত পেতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী চত্বর থেকে র্যালি বের হয়। র্যালিটি সেকেন্ড গেট হয়ে আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে শেষ হয়। ওই মাঠেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট (বিএআই)’ স্বাধীনতার পরে ‘বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’ নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে এটি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এখানে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হতো। সে হিসেবে এটিকে বাংলাদেশের তো বটেই, উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন কৃষি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রায় ৬০০ একর জমি নিয়ে যাত্রা করা এ প্রতিষ্ঠানের অশিকাংশ জমিতে এখন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম চললেও এরশাদ সরকারের আমলে সরকারি কাজ পরিচালনার জন্য মাঠটি দখলে নেয় সরকার। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকার এখানে সচিবালয় স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০২২ সালে মাঠটিতে পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।
- আরও পড়ুন
- জাবিতে ইনস্টিটিউটের শুরুতে থাকা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বাতিলের দাবি
- শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পরীক্ষা দিতে পারলেন না ছাত্রলীগ নেতা
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, মাঠ ফেরত পেতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তারা।
এসময় অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মাঠটি কীভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ একসময় আমাদের ক্যাম্পাসের নামেই ছিল। আশপাশের অনেক জায়গাও ফাঁকা ছিল। ওখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল, কেন্দ্রীয় খামারের এক অংশসহ বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম করা হতো। কিন্তু আশির দশকে তা জোর করে দখল করে নেয় তৎকালীন সরকার। সেসময় শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলেও সরকার তা গ্রাহ্য করেনি।
মানববন্ধনের বিষয়ে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের সালেহীন বলেন, আজ মানববন্ধনে এসেছি আমাদের গবেষণা মাঠ উদ্ধারের জন্য। ঢাকা শহরের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও আমাদের গবেষণার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো মাঠ নেই। শুধু এজন্য আমরা পর্যাপ্ত গবেষণা করতে পারি না। ফলে বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের দাবি একটাই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে যে মাঠটা আমাদের কাছে থেকে নেওয়া হয়েছিল, সেটা আমরা ফেরত চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য জমির প্রয়োজন বেশি। আমাদের শেকৃবিতে গবেষণা মাঠের অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে লক্ষ্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আমাদের পুরাতন জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জমিটি পেলে আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি, অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তাসনিম আহমেদ তানিম/কেএসআর/এএসএম