পোলট্রি শিল্পের নতুন সম্ভাবনা আদা-রসুনের নির্যাস: গবেষণা
আদা ও রসুনের নির্যাসে পোলট্রির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই এবং সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপের অর্থায়নে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষক দলে রয়েছেন ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমূদুল হাসান শিকদার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সায়েন্টিফিক অফিসার জাকারিয়া আল নোমান প্রমুখ।
গবেষক অধ্যাপক মাহমূদুল হাসান শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার এবং মানুষ ও প্রাণী উভয়ের জন্যই সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্সের (এমডিআর) প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্সের (এএমআর) ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা হ্রাসের কারণে নতুন ধরনের এবং প্রতিশ্রুতিশীল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এমডিআর জীবাণুর বিরুদ্ধে বিকল্প কিছু করার তাগিদেই আদা ও রসুনের নির্যাস পোলট্রির ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কতটা কার্যকারী তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।
বাকৃবির এই অধ্যাপক দাবি করেন, প্রাথমিক গবেষণায় আদা ও রসুনের নির্যাসে পোলট্রির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই এবং সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে আরও দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিশদভাবে গবেষণা করে আদা ও রসুনের কার্যকরী উপাদানগুলো নির্ণয় করা প্রয়োজন।
গবেষণাটির প্রস্তুত প্রণালী বিষয়ে অধ্যাপক মাহমূদুল হাসান শিকদার বলেন, নির্যাস তৈরির প্রস্তুত প্রণালীটি খুবই সহজ। প্রথমে আদা ও রসুন ধুয়ে কেটে নিতে হবে। এরপর পিষে ছাকনি দিয়ে ছেকে নির্যাস বের করে নিলেই পোলট্রির জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে কী পরিমাণ নির্যাস ব্যবহার করতে হবে তা নির্ণয় করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
গবেষণাগারে থিন-লেয়ার ক্রোমাটোগ্রাফি (টিএলসি) ব্যবহার করে রসুন এবং আদার বায়োঅ্যাকটিভ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ শনাক্ত করা হয়েছে। পোলট্রি থেকে আলাদা করা এমডিআর ব্যাকটেরিয়ার ওপর এই নির্যাসগুলোর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গবেষণা ফলাফল বিষয়ে অধ্যাপক জানান, রসুনের নির্যাস সালমোনেলার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা প্রদর্শন করলেও আদা ই-কোলাই এবং সালমোনেলা উভয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
‘অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কেন আদা ও রসুন ব্যবহার করা হয়েছে’— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাহমূদুল বলেন, ‘যেসব প্রাকৃতিক উপাদানে ফাইটো কেমিক্যাল থাকে, সেগুলো খরচ সাশ্রয়ী, সহজ প্রস্তুতপ্রণালী, সহজে ব্যবহারযোগ্য, কম বিষাক্ততা, দ্রুত জীবাণু বিনষ্ট করার কার্যক্ষমতা ও পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে আদা ও রসুন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।
গবেষণার বিষয়ে বিসিএসআইআরের সায়েন্টিফিক অফিসার জাকারিয়া আল নোমান বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি ও ভারতীয় আদা রসুনের মধ্যে ভারতীয় জাতে কার্যকারিতা বেশি।
তিনি আরও বলেন, গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের কার্যকারিতা সবসময় বেশি পাওয়া যায়। আমাদের গবেষণাটির সঙ্গে ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের তুলনামূলক গবেষণা করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার এবং অতিরিক্ত খরচ কমানো সম্ভব।
আসিফ ইকবাল/এসআর/জেআইএম