ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েম
ঢালাওভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, যৌক্তিক সংস্কার দরকার
কোটাবিরোধী আন্দোলনে যখন সারাদেশে শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠছে ঠিক সে সময় অনেকটা তড়িঘড়ি করেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে শেখ হাসিনার সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনও জারি করে। এ ঘটনার ৩ দিন পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের ঐতিহাসিক পতন ঘটে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
সেই আন্দোলনের ফসল যখন ঘরে তোলার মোক্ষম সময় তখনই প্রকাশ্যে এলো জামায়াতের ইসলামের শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকে দাবি করে আসছিল এ আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও ছাত্রসংগঠনটি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এ দাবির বিরোধিতা বা সমর্থন করে কোনো মন্তব্যই করেনি।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলো ছাত্রশিবির। দু-একদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে শনিবার আলোচনাও করে ছাত্রশিবির।
মঞ্জুরুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষার্থী সাদিক কায়েমের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, তিনি শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বৈঠক শেষে সাদিক কায়েম নিজেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, ঢালাওভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ নয় বরং রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। অতীতে আমরা যে দাসত্বের রাজনীতি দেখেছি, আমরা সেই রাজনীতি চাই না। এখনকার রাজনীতি হবে মেধার রাজনীতি। সেখানে সবাই নিজ নিজ অধিকার উপভোগ করবে, কেউ কারও ওপরে তার মতাদর্শ চাপিয়ে দেবে না, মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে কেউ কোনো ধরনের ট্যাগিংয়ের শিকার হবে না। সবাই তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে। ছাত্ররাজনীতি কেমন হতে পারে, এ বিষয়ে একটি পলিসি ডায়ালগ করার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র রাজনীতিবৃন্দকে রাখার কথা জানাই। এখানে সবাই প্রস্তাবনাগুলো পেশ করবেন। সবার সম্মিলিত আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হোক।
আরও পড়ুন:
- সাদিক কায়েমকে নিয়ে এত আলোচনা কেন?
- দু-একদিনের মধ্যে ঢাবি শিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
- রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
দ্রুত সময়ের ভিত্তিতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গণরুম ও গেস্টরুম বিলুপ্তের জন্য আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মেধা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সিট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছি। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরা দাবি জানিয়েছি সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে। স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের নিয়ে যে সিন্ডিকেট রয়েছে তা শিগগির ভেঙে দিতে হবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর ইন্ধনদাতা ছিল তাদেরকে যেন সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।
এর আগে, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের পরিচয় জানান দেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সভাপতি সাদিক কায়েম।
হঠাৎই সাদিক কায়েমের এমন প্রকাশ্যে আসার বিষয়টি নিয়েও অনেকের জিজ্ঞাসা কে এই সাদিক কায়েম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির শহরে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। কাপড় ব্যবসায়ীর সন্তান এই মেধাবী তরুণ খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ জবৃবারিয়া আদর্শ আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল এবং চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফলে নিজ বিভাগে তৃতীয় হয়েছিলেন। তার ছোটভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর সরব উপস্থিতি জানান দিলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
যদিও ছাত্রশিবিরকে বৈঠকে ডাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ কনভেনশনের চুক্তি বাতিল হয়ে গেল কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ। শিবিরসহ ধর্মীয় সংগঠনকে ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বামপন্থি আরও কয়েকটি সংগঠন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। অনেকটা নিরবে থেকেই সংগঠনের কার্যক্রম চালান সাদিকরা।
এমএইচএ/এসএনআর/এমএস