ভিসির অভাবে অচল শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনার বাজুর বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ দিন ধরে চলছে কমপ্লিট শাটডাউন। এরমধ্যে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারারের পদত্যাগ ও পিআরওর অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এতে বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক নাজমুল হাসান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান হাফছা আক্তার, সিএসসি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল সিয়াম, আনোয়ারুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শোভন রায়, শিহাব উদ্দিন সুমন, সায়েদাতুস সাবা, জান্নাত শারমিন মুন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মো. রাজিব মিয়া, মো. সোহেল রানা, জেবুন্নাহার বর্ণ, সংযুক্তা পাল প্রমুখ।

সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম কবীর। কিন্তু দাবি অনুযায়ী ট্রেজারার পিএম সফিকুল ইসলামের পদত্যাগ এবং জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক এনামুল হক ওরফে আরাফাত বহিষ্কার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ১৪ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কমপ্লিট শাটডাউনে চলে যান। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত উত্তরণের পথও খুলছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা গত ৮ আগস্ট শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, দুই মাসের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস চালুসহ ১১ দফা দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দিতে উপাচার্যকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। শিক্ষার্থীদের এসব দাবির মুখে ভিসি গত ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর শিক্ষার্থীরা ট্রেজারার পিএম সফিকুল ইসলামের পদত্যাগ এবং জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক এনামুল হকের বহিষ্কার দাবিতে সরব হন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সংহতি জানান। কিন্তু ওই দুই কর্মকর্তা পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা কমপ্লিট শাটডাউন দেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাজিব মিয়া।

অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত রেজুয়ান জয় বলেন, ট্রেজারারের পদত্যাগ এবং জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালককে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন থাকবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে এক মাস চলে গেলেও উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া, ট্রেজারার আত্মগোপনে থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সমস্ত কার্যক্রমে অচল বিশ্ববিদ্যালয়। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে প্রশাসনিক জটিলতা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কাজ রয়েছে যা উপাচার্য ও ট্রেজারার ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা খুবই বিপদে আছি। জটিলতা নিরসনের পথ তৈরি হচ্ছে না। ট্রেজারার পদত্যাগও করছেন না, ক্যাম্পাসেও আসছেন না। আর জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালককেতো আমার একক সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করা যায় না। নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট সহজে কাটানো যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতি পাস হয়। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পরপরই একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। শহরের রাজুর বাজার এলাকায় টিটিসির একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও পরের বছর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর জায়গায় পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের অধীন ৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১৩। শিক্ষক সংখ্যা ১৯। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৮৬ জন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও নিজস্ব আবাসন, একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, ক্যান্টিন, প্রয়োজনীয় শিক্ষকসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বৈধ করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের একজন হলেন এনামুল হক। তাকে নিয়ম নীতি লংঘন করে প্রথমে এডহক ভিত্তিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তিনি একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক হন। কিন্তু দায়িত্ব পালন করছিলেন পি এস টু ভিসি হিসেবে।

অভিযোগ রয়েছে, সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত তিনি। তার একক আধিপত্যে চলতো বিশ্ববিদ্যালয়টি। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে তিনি সবকিছুতেই অযাচিত হস্তক্ষেপ করতেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রেজারার পিএম সফিকুল ইসলাম ও পিআরও এনামুল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এইচ এম কামাল/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।