৬ টন পশুখাদ্য নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
বন্যাকবলিত দেশের দুই জেলার গবাদিপশুর জন্য ত্রাণ হিসেবে প্রায় ৬ টন পশুখাদ্য, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩১ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী ও গবাদিপশুর ত্রাণ বিষয়ক অন্যতম সমন্বয়ক রাকিব রনি।
জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে বন্যা কবলিত এলাকায় চারটি সেবা দেবেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। অসুস্থ প্রাণিগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া, যেসব প্রাণির ডায়রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি, পুষ্টি সমস্যা তাদের রুচিবর্ধক এবং ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লাই দেওয়া, পশুখাদ্য সরবরাহ ও পরবর্তীতে খামারিদের কোনো সমস্যা হলে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া।
সমন্বয়ক রাকিব রনি বলেন, দেশের কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খ্যাত বাকৃবির শিক্ষার্থী হিসেবে শুধু মানুষ নয়, আমরা প্রাণীদের পাশেও দাঁড়াবো। সে ক্ষেত্রে আমরা একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছি।
তিনি বলেন, ২৮ আগস্ট রাতে বাকৃবির একটি প্রতিনিধি দল ৩ টন পশুখাদ্য নিয়ে ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় এবং ৩০ আগস্ট আরেকটি প্রতিনিধি দল আড়াই টন পশুখাদ্য নিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় গিয়েছে। বাকি অর্ধটন পশুখাদ্য দেশের অন্যান্য বন্যা কবলিত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হবে।
ত্রাণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে রাকিব রনি বলেন, সংগৃহীত পশুখাদ্যের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সিপি বাংলাদেশ। এছাড়া ইনোভা, মিনার এগ্রো এবং লোকাল কিছু পেট কোম্পানি পশুখাদ্য পাঠিয়েছে। এছাড়া স্কয়ার, একমি, এসিআই, এসকেএফ এবং বায়োল্যাব ওষুধের যোগান দিয়েছে।
টেলিমেডিসিন সেবা বিষয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মাশারাত মালিহা বলেন, গবাদিপশুগুলো অনেকদিন না খেয়ে থাকায় তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। ওইসব অঞ্চলের খামারিদের ভেটেরিনারিয়ানদের নম্বর দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে গবাদি পশুগুলো যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে খামারিরা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবে।
এ বিষয়ে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক বলেন, বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে মানুষের পাশাপাশি তাদের গবাদি পশুগুলোও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। অসংখ্য পোলট্রি খামার, গবাদিপশুর খামার ধ্বংস হয়েছে। যার ফলে আমাদের ভেটেরিনারি এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন ‘অ্যানিমেল স্যাভিয়ার্স অব বাউ’ তাদের তত্ত্বাবধানে দুর্গত এলাকার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে সাহায্য চায়। বিভিন্ন ফিড কোম্পানি ও ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে ছয় টন পশুখাদ্য ও ওষধ সংগ্রহ সম্ভব হয়।
অধ্যাপক আরও বলেন, আমাদের দুটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা গত ৩-৪ দিন ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের ছাত্ররা টেকনিকেল সাপোর্ট দেওয়ার জন্যও যাবে, চিকিৎসা এবং মেডিসিন দিয়েও সাপোর্ট করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তারা সমাজের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফেনীতে অবস্থানরত বাকৃবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ফেনীর অন্যতম তিনটি বন্যা দুর্গত এলাকা ফুলগাজী, পশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় ৯০০ খামারিদের মাঝে পশুখাদ্য, ওষুধ এবং কয়েকটি খামার পরিদর্শন ও বিভিন্ন টেকনিকেল পরামর্শ প্রদান করা হয়। উক্ত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ জায়গায় মানুষের খাদ্যের অপর্যাপ্ততা না থাকলেও, পশুখাদ্যের অপর্যাপ্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপস্থিত খামারিরা ও ফেনীর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
বাকৃবির এই টিমটির আগে কেউ এত বড় পরিসরে পশুখাদ্য দিয়ে খামারিদের সাহায্য করেনি বলেও জানান উপস্থিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও খামারিরা।
মৌলভীবাজারে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জাগো নিউজকে জানান, মৌলভীবাজারের খামারিরা যোগাযোগ করে আমাদের জানিয়েছে সেখানকার গবাদি পশুগুলোর খুবই খারাপ অবস্থা। তাদের সাহায্য করতেই আমরা মৌলভীবাজারে এসেছি।
আসিফ ইকবাল/এফএ/এমএস