শাবিপ্রবি

অভিভাবকশূন্য ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ২৫ আগস্ট ২০২৪

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণহারে পদত্যাগ করেছেন প্রশাসনিক ব্যক্তিরা। এরই ধারাবাহিকতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা দিয়েছে অভিভাবকশূন্যতা। প্রশাসনে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা না থাকায় ভয়ে হল ছেড়েছেন কেউ কেউ।

গত ২২ আগস্ট মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হল এলাকায় হেলমেট পরে ৮-১০টি মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগবিরোধী স্লোগান দেয় এবং পরদিন দুপুরের মধ্যে হলে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীকে কল দেয় এবং রাত ৩টার দিকে সেনাবাহিনী এসে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়। কারা এই শোডাউন দিয়েছে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলেও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এরপর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায়ও ক্যাম্পাসের নিকটস্থ নয়াবাজার এলাকা থেকে টিলারগাঁও পর্যন্ত ছাত্রলীগবিরোধী শোডাউন দেয় স্থানীয়রা। এতে আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা।

হলে উদ্ভূত এ সমস্যা ও নিরাপত্তার বিষয়ে ২৩ আগস্ট রাতে একটি বিবৃতি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শাবি শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব।

বিবৃতিতে গালিব বলেন, হলকেন্দ্রিক যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে এর সমাধানের জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী হল ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে আজকের (২৩ আগস্ট) রাত আমরা হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসার আগ পর্যন্ত যাতে কেউ হল দখল করতে না পারে আমরা সবাই মিলে সেইটা নিশ্চিত করবো। ইনশাআল্লাহ।

অভিভাবকশূন্য ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসার পর নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে সবাই হলে উঠবে।

বিবৃতি দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাবিপ্রবির অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলোতে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে।

হল ছাড়া নিয়ে এমন বিবৃতির প্রতিবাদে শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে হলের কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করে প্রশাসন আসার পূর্ব পর্যন্ত নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হলে থাকার ঘোষণা দেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া বাকি শিক্ষার্থীরা ‘হ্যাঁ’ বলে এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে হল ছাড়া বা হলে থাকার বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা হয়নি। বরং হলের কিছু শিক্ষার্থী হলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছেন এবং তারা হল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানালে আমরা এমন পরিস্থিতিতে হল ছেড়ে দেওয়া উত্তম বলেছি।

এদিকে হলসূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে অল্প অল্প করে কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হল ছেড়েছেন। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পরিচিতজনদের মেসে নিয়ে রেখেছেন। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হলে থাকবেন না বলে জানান তারা। তবে এখনো শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ হলে আছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, হলে এখন নিরাপত্তা নেই। তিনদিন ধরে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি হল ছেড়ে দিব। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র এক বন্ধুর মেসে নিয়ে রাখছি।

নাঈম আহমদ শুভ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।