বাকি খেয়ে উধাও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা, চলতো চাঁদাবাজি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২৪

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আশপাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। আবার অনেকে অস্থায়ী খাবারের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করেন। এসব দোকানে বছরের পর বছর বাকি খেয়ে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পাওনা টাকা চেয়ে অনেকে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন। এমনকি ছাত্রলীগের নামে এসব দোকানে চলতো চাঁদাবাজিও। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই উধাও তারা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের পাওয়া টাকা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও অনেকেই নিজেদের পরিচয় দিতেন সংগঠনটির নেতাকর্মী হিসেবে। আর এই পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি ও বাকি খাওয়া চলতো। ২০১৭ সাল থেকে এভাবে বাকি খাওয়ার প্রচলন বাড়তে থাকে। পাওনা টাকা চেয়ে অনেকে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন। ফলে এসব ছাত্রলীগ নেতাদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন দোকানদাররা। ৫ আগস্টের পর থেকেই বেরিয়ে আসছে ফাস্টফুড, খাবার হোটেল, স্টেশনারি ইত্যাদি নানা দোকান থেকে কীভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উত্তর দিকে ‘ফরেনের দোকান’ নামে পরিচিত ফাস্টফুডের দোকান মালিক ফিরোজ আলম মোল্লা বলেন, যখন ছাত্রলীগের যে গ্রুপ ক্যাম্পাসে শক্তিশালী ছিল, তখন সে গ্রুপের প্রধান নেতারা বাকি খেতেন ও চাঁদাবাজি করতেন। একসময় সিফাত, মিষ্টু তারপর রিদম, শান্ত এরকম ১৫-২০ জন হাজার হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন। এখন তাদের ফোনও বন্ধ।

ক্যাম্পাসে পাশে থাকা ভোলা রোডের আল্লাহর দান হোটেলের মালিক ইউনুছ মল্লিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কমপক্ষে ২০ জন আমার দোকানে ৫-৬ বছর যাবত বাকি খেয়েছেন। এদের মধ্যে রাজীব মণ্ডল, আরাফাত, শান্ত অগ্রগণ্য। আমি ছাড়াও অনেক দোকানদাররা ভুক্তভোগী। কিন্তু ভয়ে এতদিন কেউ কিছু বলতে পারিনি। এখন আর তাদের খোঁজ পাচ্ছি না।

একই স্থানের হাওলাদার হোটেলের মালিক মো. আনিছ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পাওনা টাকা চাওয়ায় একদিন আমার গলায় ছুরি ধরেছিল কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এমন কোনো দোকান নাই যেখান থেকে ওরা ফাও খায়নি। তবে তুষার, রাজিব, মিষ্টু, আরাফাত, রাকিব, নাহিদসহ চিহ্নিত কয়েকজন যে যন্ত্রণা দিয়েছে তা অবর্ণনীয়।

ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র সেলিম স্টোরও রক্ষা পায়নি ছাত্রলীগ নেতাদের হাত থেকে। দোকানটির মালিক মো. সেলিম বলেন, আমি কারো পরিচয় প্রকাশ করবো না। তবে ২০১৭ সাল থেকেই বিভিন্ন ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারী আমার দোকান থেকে মূল্য পরিশোধ ছাড়াই হাজার হাজার টাকার পণ্য নিয়ে গেছে। প্রায় ২০ জনের হিসাব আমার বাকির খাতায়। এদের মধ্যে অনেকে লেখাপড়া শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিয়েছে। অনেকের এখনো লেখাপড়া শেষ হয়নি।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, যা হয়েছে এ পর্যন্তই। ভবিষ্যতে আর এমন চাঁদাবাজি হতে দেবো না। যে মানুষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের নিরাপত্তার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের আন্দোলনে তাদের অবদান আছে। তাই তাদের পাওনা টাকা আদায়ে সহযোগিতা করবো।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, এটা তো রুচির ব্যাপার। কারো ভেতরে প্রকৃত শিক্ষা থাকলে সে এমন করতে পারে না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেবো।

শাওন খান/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।