পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. গোলাম কবীর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৪

নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর পদত্যাগ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি পূরণ না করার প্রেক্ষিতে রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি পাঠান বলে জানান।

রাত পৌনে ১১টার দিকে গোলাম কবীর মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ, নিজস্ব ক্যাম্পাস, হোস্টেলসহ ১১ দফা দাবি জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল। ৩০তম সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের একটি দাবি (রাজনীতি মুক্ত) পূরণ করা হয়। অন্য দাবিসমূহ রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশসহ সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি কামনা করে স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।

অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) মহোদয়ও পদত্যাগ করবেন বলে জেনেছি। তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় আজ পদত্যাগ করতে পারেনি বলে জেনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যোগদানের পর আমি আমার অভিজ্ঞতা, সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা ও আইন মেনে কীভাবে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক, এই কামনা করছি।’

পদত্যাগপত্রে অধ্যাপক গোলাম কবীর উল্লেখ করেছেন ‘আমি ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত সমৃদ্ধি ও বিকাশে সচেষ্ট থেকেছি। সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট শিক্ষার্থীদের দাবিনামা উত্থাপিত হয় যা সিন্ডেকেট আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানযোগ্য দাবিসমূহ এরইমধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত দাবি রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ব্যতীত নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় সেগুলোতে আপনার সহমর্মিতা কামনা করছি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি ও নিশ্চয়তা প্রদানে আমি অপারগ, বিধায় ভাইস চ্যান্সেলরের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতি পাস হয়। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার সুব্রত কুমার আদিত্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ৪ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর শেখ হাসিনা এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠার পরপরই একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। শহরের রাজুর বাজার এলাকায় টিটিসির একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও পরের বছর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর জায়গায় পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের অধীন ৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১৩। শিক্ষক সংখ্যা ১৯। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৮৬ জন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও নিজস্ব আবাসন, একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, ক্যানটিন, প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বৈধ করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এইচ এম কামাল/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।