ফাঁকা ক্যাম্পাসে পশুপাখির একমাত্র ভরসা রাবির গাজীউল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খাবার খাচ্ছে কয়েকটি বিড়াল

১৬ বছর ধরে পশুপাখির সেবা করে যাচ্ছেন। খাওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসাসহ সব খরচ নিজেই বহন করেন। প্রতিদিন সকালে তার একটা অংশ কাটে পশুপাখির সঙ্গে। কুকুর ও বিড়ালের ভাষাও বোঝার বাকি নেই তার।

বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক (টিএসসি) কেন্দ্রের উচ্চমান সহকারী গাজীউল ইসলামের কথা।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালে নিজের অর্থায়নে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পশুপাখির জন্য কাজ করছেন। প্রথমে নিজ অর্থায়নে শুরু করলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সহযোগিতার হাত বাড়ান। মানবিক জায়গা থেকে এ কাজ করছেন।

পশুপাখির মধ্যে রয়েছে কুকুর, বিড়াল, শালিক, কবুতর। রাবি ক্যাম্পাসে ৬০টির মতো কুকুর ও ১২ বিড়াল আছে। গাজীউলের বাসায় আরও ১৪টি কুকুর ও ১৫০টির মতো কবুতর আছে। ক্যাম্পাসে কিছু শালিক পাখিও রয়েছে।

গাজীউল সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর টিএসসিতে এসে এসব পশুপাখির জন্য খাবার রান্না করেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে ৯টি পয়েন্ট ভাগ করে পশুপাখিকে খাওয়ান তিনি।

পয়েন্টগুলো হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবন, রসায়ন বিভাগের পেছনে, লাইব্রেরি চত্বরের পাশে, প্রশাসন ভবনের সামনে, পরিবহনের মার্কেট, মতিহার হলের সামনে, মেডিকেল সেন্টারের পাশে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরের পাশে ও বিনোদপুর গেট। এসব পয়েন্টে রান্না করা খাবার বিলি করতে প্রতিদিন ছুটে যান তিনি। ৬০টি কুকুর ও ১২টি বিড়ালের খাবারের রান্না থেকে শুরু করে খাওয়ানো পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সময় লাগে গাজীউলের।

ক্যাম্পাসে কোনো ক্ষুধার্ত কুকুর বা বিড়াল দেখলেই দোকান থেকে খাবার কিনে দেন তিনি। শুধু খাবার খাওয়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, অসুস্থ কুকুর বা বিড়াল ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা সেবাও দেন। এমন সখ্যতার কারণে তার ভক্ত কিছু কুকুরের নাম দিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে শেফালী, মটু, কালী, ফাটি অন্যতম। ওদের নাম বলে ডাকলেই দ্রুত চলে আসে তার কাছে।

গাজীউল জানান, পশুপাখির প্রতিদিনের খাবারের উপাদানের মধ্যে চাল, গরুর মাংসের চর্বি আর ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি থাকে। প্রতিবেলা খাবারের মধ্যে থাকে ১০ কেজি চাল, এক কেজি গরুর চর্বি। যার খরচ পড়ে ৭০০ টাকার মতো। এতে প্রতি মাসে গাজীউলের ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। এই অর্থায়নের অর্ধেকই যায় তার পকেট থেকে। বাকি অর্ধেক শিক্ষকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পান।

গাজীউল জাগো নিউজকে বলেন, পশুপাখির প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকেই এ কাজ করছি। তাদের সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে ওঠেছে। আমার গাড়ি যেতে দেখলেই পেছনে পেছনে ছুটতে থাকে তারা।

প্রতিদিন ৬০-৭০টি প্রাণীর খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। আমার এ কাজে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরমধ্যে উপাচার্য ড. আমীরুল ইসলাম কনক ও পারভেজ আজহারুল হক অন্যতম।

এ বিষয়ে রাবির ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক ড. আমীরুল ইসলাম কনক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটা পরিবারের মতো। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পশুপাখিও রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পশুপাখির জন্য একটা কঠিন অবস্থা দাঁড়িয়ে ছিল। তখন থেকেই এদের পাশে থেকে কাজ করা। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যেমন দরকার, তেমনি সব জীবজন্তুর প্রতি খেয়াল রাখা দরকার। এটি একটি মানবিক কাজ।

অনুদানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ। ফলে ক্যাম্পাসের পশুপাখিগুলো খাবার না পেয়ে ছটফট করছে। তার মধ্যেই গাজীউল পশুপাখির পাশে দাঁড়িয়েছেন, যা মানবতার পরম দৃষ্টান্ত।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কিছুদিন বন্ধ থাকবে। ফাঁকা ক্যাম্পাসের পশুপাখির কথা চিন্তা করে আমি এই অনুদান দিয়েছি।

পশুপাখি সংরক্ষণে মানবিক জায়গা থেকে সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন উপাচার্য।

মনির হোসেন মাহিন/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।