১৯৭২ সালে দেশে বড়জোর এক শতাংশ রাজাকার ছিল: আসিফ নজরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৪
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজাকার নয়। ১৯৭২ সালে দেশে বড়জোর এক শতাংশ রাজাকার ছিল। বাকি ৯৯ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা।’
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল একথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এ সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, সরকারের যেসব মন্ত্রী-আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন দমনে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ অপরাধে সহায়তা করার অপরাধে তাদেরও বিচার করতে হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজপথে যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, বিচার বিভাগের। ছাত্রলীগের দায়িত্ব নয়। তাদের কেন হামলে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, তার জবাব অবশ্যই জাতির কাছে সরকারকে দিতে হবে।
আরও পড়ুন
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, সেটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা জানিয়ে ঢাবির আইন বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, বাহাত্তরের যে সংবিধান, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনার মধ্যে অন্যতম ছিল অসাম্য, বৈষম্যহীনতা, সুযোগের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। অথচ আজ অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এটা আমরা শিক্ষকরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজাকার নয়। ১৯৭২ সালে দেশে বড়জোর এক শতাংশ রাজাকার ছিল। বাকি ৯৯ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। আজ যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমেছেন, তারাও সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং উত্তরসূরি। তাদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার দুঃসাহস দেখাবেন না। যখন তখন যাকে-তাকে রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করুন। তা না হলে আপনাদের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হেয় হবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি করে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছে, মেরেছে, তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে। এগুলো মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই এ অপরাধের বিচার করতে হবে।
কার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে- প্রশ্ন রেখে এ অধ্যাপক বলেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো। কার স্বার্থে এ ঘোষণা দেওয়া হলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে? এক্ষেত্রে কার স্বার্থ, কী স্বার্থ বিবেচনা করা হলো, সেটাও আমরা জবাব চাই।
শিক্ষার্থীদের ওপর এরপর আর কোনো নির্যাতন হলে মেনে নেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা এসেছে। আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীরা হল ছাড়বে কি না, তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তাদের ওপর জোর-জুলুম করে, অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হলে আমরা সহ্য করবো না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শতাধিক শিক্ষক।
এএএইচ/এএসএ/এএসএম