রাতভর তাণ্ডব, রণক্ষেত্রে রূপ নিলো জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর রাতভর কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ ২ শতাধিক আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ প্রথম আক্রমণ করে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বটতলায় এবং বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন মোড়ে। তখন থেকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারি চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। এখানেও কয়েক দফায় হামলা করে ছাত্রলীগ। এ সময় শিক্ষক, সাংবাদিক এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাসহ গুরুতর আহত হন দুই দলের বেশ কয়েকজন।
এরপর রাত ১০টার দিকে শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে সুষ্ঠু বিচার এবং প্রশাসনের জবাব চেয়ে নানান স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের হামলার কথা জানতে পেরে তারা ভিসির বাসভবনের ভেতরে অবস্থান নিলে রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ সেখানে প্রবেশ করে তাদের ওপর হামলা করে। ইট-পাটকেল ও পেট্রোল বোমা ছোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপরও। বাধ্য হয়ে সরে পড়তে হয় সাংবাদিকদের।
এ সময় ছাত্রলীগের তাণ্ডব চলে রাত তিনটা পর্যন্ত। এরপর বিভিন্ন হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রে বের হয়ে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান সংলগ্ন গেট দিয়ে পালিয়ে যায়।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা উপউপাচার্যের বাসভবনের পেছনে অবস্থান নিয়ে হাত উঁচু করে তাদের আইডিকার্ড দেখালেও গুলি ছোড়ে পুলিশ, আহত হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
পুলিশ তাদের ফোর্স আরও বৃদ্ধি করে এবং সাজোয়া যান নিয়ে অবস্থা নেয়। এরপর ক্যাম্পাসের চৌরঙ্গী এলাকাসহ কয়েকস্থানে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পুলিশ গুলি চালায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও বহিরগতরা দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের ওপর হামলা করেছে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা পিছু হটে।
অপরদিকে সাংবাদিকদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার শুরু থেকেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত মনোভাব দেখান হামলাকারী ও পুলিশ সদস্যরা। ছাত্রলীগ বেশ কয়েকবার ধাওয়া ও অস্ত্র নিয়ে চড়াও হওয়াসহ ইটপাটকেল নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, আমি অপারগ, আমি চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি।
ছাত্রলীগের প্রস্তুতির ব্যাপারে সাংবাদিকরা তাকে অন্তত ২ ঘণ্টা আগে জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিলেও কেন তিনি ব্যবস্থা নেননি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এফএ/জিকেএস