আন্দোলনকারীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন

‘তুই শিবির করিস এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দেবো’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাবি
প্রকাশিত: ০৯:২২ পিএম, ১১ জুলাই ২০২৪
ভুক্তভোগী রাবি শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শিবির সন্দেহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বঙ্গবন্ধু হলে আটকে রেখে এলোপাতাড়ি মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজ রহমান বাবুসহ তার একাধিক অনুসারীর বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে (কক্ষ নম্বর ২৩০) এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন। প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ক্যাম্পাসে ফিরবেন না বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী মোস্তফা মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়।

অভিযুক্তরা হলেন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজ রহমান বাবু, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজাসহ অনেকে। অন্যরা সভাপতি বাবুর অনুসারী বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মোস্তফা মিয়া। এতে তিনি উল্লেখ করেন, সোমবার (৮ জুলাই) রাবির চারুকলা সংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচে কোটাবিরোধী আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। বিষয়টি জানার পর ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ তাকে কল দিয়ে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলেন। পরে তিনি ভয় পেয়ে বিষয়টি তার বিভাগের বড় ভাই সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদকে অবহিত করেন। আরিফ মাহমুদ ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজাকে বিষয়টি জানান। পরে শামীম রেজা তাকে ছাত্রলীগের হাতে ধরিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সকালে বিভাগের বড় ভাই আরিফের সঙ্গে দেখা করতে তিনি শহিদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে ধরে ফেলেন এবং ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসবো নাকি’ বলে টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যান শামীম রেজা। সেখান থেকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর কক্ষে নিয়ে যান। পরে ভুক্তভোগীর ফোন চেক করতে শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি। ফোন চেক করে শিবিরের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখেন। পরে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং বলেন ‘তুই শিবির করিস স্বীকার কর’। কিন্তু শিবিরের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকায় ভুক্তভোগী বারবার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

একপর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এসময় কয়েকজন তাকে ঘিরে রাখেন। ৮-১০ মিনিট মেরে কিছুসময় বিরতি নিয়ে আবারও মারতে শুরু করেন। এভাবে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ভুক্তভোগীর ওপর নির্যাতন চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ফারহাদ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা ভুক্তভোগীর কানে কানে বলেন, ‘তুই শিবির করিস এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দেবো’। আর তোর বিভাগের কে কে শিবির করে এটা বললে ছেড়ে দেবো’। একপর্যায়ে স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তারা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। একইসঙ্গে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় মোস্তফা মিয়াকে।

এদিকে, বাবুর একজন অনুসারী গিয়ে জোহা হলের গণরুম থেকে ওই শিক্ষার্থীকে বের করে দেন। পরে আজ সকালে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘আমাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। খুবই অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে চলে এসেছি। আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমি খুব আতঙ্কে আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতক্ষণ না আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, ততক্ষণ আমি ক্যাম্পাসে ফিরবো না।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

মনির হোসেন মাহিন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।