কোটা বাতিল নয়, যৌক্তিক সংস্কার চায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২৪
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সংবাদ সম্মেলন

কোটা বাতিল কোনোভাবেই সমাধান নয়, কোটার যৌক্তিক সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে আটটি বাম ছাত্রসংগঠনের এ জোট। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগিব নাঈম।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র জোটের নেতারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হওয়া জনগণের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ কোটা প্রথা বাতিল করা কি সমাধান? আমরা তা মনে করি না। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই চটকদার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৮ সালে ছাত্রদের দাবি ছিল কোটা সংস্কারের। অথচ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। মাত্র ছয় বছরের মধ্যে হাইকোর্ট সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। তাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগিব নাঈম বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। এরই মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট একাত্মতা পোষণ করছে। একই সঙ্গে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈষম্যমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য, আপাত অর্থে সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটা প্রথার প্রচলন। অথচ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থে এদেশে কোটা প্রথা নিজেই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। যার বাস্তব উদাহরণ হলো মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আজও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ কোটাব্যবস্থা কোনোক্রমেই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। শাসকদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সামাজিক সাম্য তৈরির বদলে বৈষম্যের প্রতিরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। অথচ ৫৩ বছর পরও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মর্মবস্তুকে অস্বীকার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট দুটি দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো- বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং অনুন্নত, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণির জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক এবং বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া।

এমএইচএ/এসআইটি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।