ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসজুড়ে বিষাক্ত আগাছা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
চন্দ্রমল্লিকার ন্যায় পাতাবিশিষ্ট আগাছা পার্থেনিয়াম। উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট। চিকন সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা ফুলে বেশ আকর্ষণীয় দেখায় গাছগুলোকে। দেখতে সুন্দর হলেও ছোট এ গাছ অত্যন্ত ভয়ংকর। জ্বর, মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। আর এ উদ্ভিদে সয়লাব হয়ে গেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। যার ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড়, পেয়ারাতলা, ক্রিকেট মাঠ, ফুটবল মাঠ, ছাত্রী হলগুলোর রাস্তা, মফিজ লেক, জিমনেসিয়াম এলাকা, আবাসিক হলের অভ্যন্তর-বাইরে এবং শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ভরে গেছে বিষাক্ত এ আগাছায়। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসমূহের রুমের পাশেও শিকড় গেড়েছে বিষাক্ত আগাছাটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগাছাটির ফুলের রেণুতে রয়েছে পার্থেনিন নামক সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ফলে নিশ্বাসের সঙ্গে নাকে প্রবেশ করলে জ্বর, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট হয়। ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এর রস চামড়ায় লাগলে সেখানে ক্যান্সার হতে পারে। এটি মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করে।
এ ধরনের আগাছাগুলোর রেণুর সংস্পর্শে গেলেই জ্বালাপোড়া, ব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারি। এটি মানুষ, গবাদিপশু ও পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের আগাছাগুলো আশপাশের মাটি ও উদ্ভিদসমূহের ক্ষতি সাধন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি ইনজামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জন্মানো আগাছাগুলো পার্থেনিয়াম প্রজাতি। পার্থেনিয়ামের ১৬টি প্রজাতি রয়েছে। সবগুলো বিষাক্ত নয়। তবে বাংলাদেশে যে প্রজাতিটি ছড়াচ্ছে সেটি অত্যন্ত বিষাক্ত। এগুলো নিয়ে বাংলাদেশে কম গবেষণা হয়েছে তাই মানুষের মাঝে প্রচার এবং সচেতনতা কম।’
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের বিস্তার বাড়ছে। পার্থেনিয়ামের মূল উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। সেখান থেকে এ বিষাক্ত আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে চিন, নেপাল, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। এটি একটি ভয়ঙ্কর আগাছা যা ফসলের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে।
এদিকে আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত নন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। দেখা যায়, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠে খেলার সময় ঝোপের ভেতর দিয়ে অনায়াসেই চলাচল করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে নিজের অজান্তেই বাড়ছে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টের মতো জটিল রোগ। মেয়েদের অনেককে এ আগাছার ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা অনেক পরিবারের শিশুদেরকে এসব ফুল নিয়ে খেলা করতে দেখা যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ রিয়াজ পারভেজ বলেন, ‘এর আগে আগাছাটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তেমন অবগত নয়। যার কারণে হয়তো নির্দ্বিধায় আমরা সেগুলোর সংস্পর্শে চলে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকিতে পড়ছি। বিষাক্ত আগাছাগুলো অতিদ্রুত পরিষ্কারের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এ বিষয়ে ক্যাম্পাসে ঘাস কাটতে আসা ভুক্তভোগী অলি মোল্লা নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ক্যাম্পাসে ঘাস কাটি। এসব আগাছা যে ক্ষতিকর তা আমার জানা নেই। এসব আগাছা শরীরে স্পর্শ লাগলে চুলকায় এবং লাল হয়ে যায়।’
একটি পার্থেনিয়ামের আগাছা থেকে জন্ম নিতে পারে প্রায় ৪-৫ হাজার আগাছা। এছাড়া এর বীজ হালকা ও প্যারাসুটের ন্যায় হওয়ার কারণে দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে এর বংশবিস্তারও দ্রুত হয়। রমজান ও ঈদের সময় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসের সর্বত্র ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে আগাছাটি। আগাছাটির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত থাকলেও সেগুলো কাটার ব্যাপারে বরাবরের মতোই উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জন্মানো আগাছাগুলো পার্থেনিয়াম। শুধু ক্যাম্পাস নয় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন জায়গায় এটি দেখা যাচ্ছে। মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য এটি ক্ষতিকর। ফুল হওয়ার আগেই এ গাছ তুলে ফেলা প্রয়োজন। কেটে ফেললে আবারও জন্মাবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরের প্রধান সামছুল ইসলাম জোহা বলেন, ‘এর আগেও বেশকিছু পার্থেনিয়াম নিধন করা হয়েছে। বর্তমানে পার্থেনিয়ামসহ সবধরনের আগাছা নিধনের কাজ চলমান। আমাদের জনবল কম থাকায় কাজের গতি কম। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল নিয়ে খুব দ্রুতই পার্থেনিয়ামসহ সকল আগাছা পরিষ্কার করা হবে।’
আরএইচ/এএসএম