জারুল-সোনালু-কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন ইবি ক্যাম্পাস
অডিও শুনুন
লোহিত কৃষ্ণচূড়ার রক্তলাল রঙের সঙ্গে মিলেছে হলুদ সোনালু আর বেগুনি জারুল। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সবুজ চত্বর সেজেছে লাল, হলুদ ও বেগুনি রূপে। হরেক রঙের মিলন ক্যাম্পাসকে দিয়েছে নতুন সৌন্দর্য।
বৈশাখের আকাশে যখন গনগনে সূর্য। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ মানুষ। প্রখর রৌদ্র আর তপ্ত বাতাসে যখন পুড়ছে প্রকৃতি। তখনই বাহারি ফুলগুলো নিজেদের মেলে ধরেছে স্বমহিমায়। জানান দিচ্ছে সৌন্দর্যের বার্তা। প্রকৃতির রুক্ষতাকে ছাপিয়ে মোহিত করছে সবাইকে। এ যেন প্রকৃতিকে গ্রীষ্মের উষ্ণ অভ্যর্থনা। রোদের তীব্রতাকে ছাপিয়ে চক্ষু শীতল করছে শিক্ষার্থী-দর্শনার্থীদের।
চিরসবুজ এ ক্যাম্পাসকে রঙিন করতে বরাবরের মতোই প্রধান ভূমিকায় আছে কৃষ্ণচূড়া। ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) চারপাশকে সাজিয়ে রেখেছে কয়েকটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। বিকেল হতেই শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে টিএসসিসি। সেলফি-ছবি তোলার উৎসবস্থল হয়ে উঠেছে টিএসসিসির কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল, জিয়াউর রহমান হলসহ বেশিরভাগ হলের সামনেই দেখা যায় রক্তলাল কৃষ্ণচূড়াকে। এছাড়া একাডেমিক ভবনগুলোতে, ভিসির বাংলো, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকাসহ পুরো ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে রেখেছে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল।
এরইমধ্যে বেগুনি রঙ নিয়ে ফুটে আছে জারুল। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহের সঙ্গে যেন প্রতিযোগিতা করে ফুটছে এ ফুল। নমনীয় পাপড়িতে বেগুনি রঙে ফুলটি অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। ডায়না চত্বর, বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং সংলগ্নসহ ক্যাম্পাসের আবাসিক ও একাডেমিক এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গাছগুলোতে ফুটে আছে এ ফুল।
কৃষ্ণচূড়ার লাল আর জারুলের বেগুনি রঙের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া হলুদ সোনালু আর কনকচূড়া। লাল-সবুজের পাশে সোনালু আর কনকচূড়ার হলুদ নৈসর্গিক সৌন্দর্য এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ ধাঁধিয়ে দেয় হলুদে ছাওয়া সোনালু। ডায়না চত্বরে সারিবদ্ধ গাছে ঝুমকার মতো ঝুলে থাকা সোনালু ফুল যে কারো মন ছুঁয়ে দেয়। অনেকটা সোনার চেইনের মতো ঝুলে আছে গাছের শাখা ছাপিয়ে। দাউদাউ আগুনের মতো হলুদ রঙে আলোকিত করে রেখেছে চারপাশকে।
ডায়না চত্বরে সারি সারি সোনালু ফুলের সাথে সঙ্গী হয়েছে কনকচূড়া। হলুদ কৃষ্ণচূড়াখ্যাত এ ফুল নিয়ে বিশাল একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে টিএসসিসির সামনে। ঊর্ধ্বমুখী ফোটা এ ফুল গাছটি দেখে মনে হবে যেন শ্রান্ত পথিকের জন্য এক হলুদ ছাতা। হলুদ আভায় চতুর্দিকে আলোক বিষ্ণুরণ করে মুগ্ধ করে সবাইকে। পদতলে ঘাসফুলে ছেয়ে থাকা সবুজ ঘাসের কার্পেট আর ওপরে লাল, হলুদ আর বেগুনি রং—এ যেন প্রকৃতির মনোরোম উপহার। আর এমন প্রাকৃতিক রঙেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ শীর্ষ বিদ্যাপিঠটি রূপ নিয়েছে রঙিনে।
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জিন্নাত মালিহা সীমা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস সবসময়ই সুন্দর। তারপরও গ্রীষ্মের এ সময়ে ফোটা নানা রঙের ফুল সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অনেক সময় এসব ফুল দেখার জন্যই ক্যাম্পাসে বের হই।’
বাংলা বিভাগের ইমরান হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বের হলেই চোখে পড়ে বিভিন্ন রঙের ফুলের সমাহার। দেখে মন ভরে যায়।’
ক্যাম্পাসে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা সাথিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ক্যাম্পাসের পাশেই। ক্যাম্পাসের সবুজ পরিবেশ ফুলের এ সময়টাতে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। ফুল দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। তাই ছুটে আসি।’
এসআর/জিকেএস