ফুল-ছায়ায় সুশোভিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হাসান আলী
হাসান আলী হাসান আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/জাগো নিউজ

আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে গাছে যেন ছোট ছোট সোনার টুকরো দানা বেঁধে ঝুলে আছে কিংবা কোথাও যেন তীব্র ও স্নিগ্ধ সাদার মেলা বসেছে। যে মেলায় সাদা রঙকে মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্প, শ্রেষ্ঠ আকাঙ্ক্ষিত রং। আবার কোনো কোনো গাছের নিচে গেলে মায়াজড়ানো গন্ধে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। যে দৃশ্য দর্শনে স্নিগ্ধতা নেমে আসে নাম না জানা কোনো এক স্বর্গপুরী থেকে। এমন দৃশ্যই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপ হয়ে ধরা দিয়েছে।

তীব্র দাবদাহে যখন সামান্য একটু স্বস্তির জন্য দেশের মানুষ হাঁসফাঁস করছে, ঠিক এমনই এক অশান্তির বসন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মন ও মনন শীতল করার জন্য আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে ক্যাম্পাসের বাহারি ফুলগুলো। সবুজ পাতার ফাঁকে নানান ফুলের রঙে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস। যেন প্রকৃতির মুখে নানান রঙের আবির মেখে দিয়েছে কেউ। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে থোকায় থোকায় ফুটেছে রক্তিম ফুল।

এছাড়া রাঁধাচূড়া, সোনালু, জারুল ফুল, বকুল ফুল, কনকচূড়া, বাগানবিলাসী, কাঠগোলাপ, অপরাজিতা, রঙ্গন, সূর্যমুখীসহ চেনা অচেনা অনেক ফুলের সমাহার ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তৈরি হয়েছে এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ।

ফুল-ছায়ায় সুশোভিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব ফুলের গন্ধ নিতে ও নিজের স্মতির পাতায় সুন্দর মুহূর্তটি যুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসছে, ছবি তুলছে। মলচত্বর, ফুলার রোড, কলাভবন, শ্যাডো, চারুকলা অনুষদ, বিভিন্ন আবাসিক হল, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, আইন অনুষদ, কার্জন হল এলাকা এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের গাছগুলো নিজ নিজ সৌন্দর্য উজার করে নিজের ডালপালাগুলো সুশোভিত করে রেখেছে।

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবির কালচার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহার মতে যেটি ‘ইউনিক’। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরো ঢাকা শহরের সবুজ চত্বর হিসেবে পরিচিত। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে এটি ধরে রেখেছি। যার ফলে প্রকৃতির নিয়মে যে ফুলগুলো ফুটেছে তীব্র গরমেও কিন্তু তাতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচুড়া, সোনালুসহ এই ফুলগুলোর যে রঙের সংমিশ্রণ, বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত হয়ে সবুজের ফাঁকে উকি মারে, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিক। এমন আর খুব কমই আছে। এখানে অনেক দর্শনার্থী আসেন। অনেক সময় আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করি, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ঢাকা শহরে আর এমন কোনো জায়গা নেই।’

ফুল-ছায়ায় সুশোভিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম বুশরা বলেন, ‘প্রকৃতি যেন তার রঙতুলির আঁচড় লাগিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রকৃতির এ সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও। লাল রঙের মন মাতানো কৃষ্ণচূড়া কিংবা হলুদ রঙের সেই সোনালু, বেগুনি রঙের জারুল দেখে মত্ত হয়ে কবি না হয়েও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। সবমিলিয়ে এই দাবদাহেও যেন চোখের প্রশান্তি। এসব দেখে মনে হয়, যতটুকু ফাঁকা জায়গা আছে ততটুকুতেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বনায়নের উদ্যোগ নেয় সেটা মন্দ হবে না।’

মোহাম্মদপুর থেকে স্ত্রীসহ ঘুরতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে আসলে ঘুরে বেড়ানোর মতো তেমন উল্লেখযোগ্য জায়গা নেই। তার ওপর যে পরিমাণ গরম। একটি ভিডিওতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ফুলগুলো দেখেছিলাম। এত ভালো লেগেছিল যে আমি পরদিনই এখানে চলে এসেছি। সবমিলিয়ে ভালোই লাগছে।’

ফুল-ছায়ায় সুশোভিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

ক্যাম্পাসের এমন সৌন্দর্য ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সাধারণত আরবরি কালচারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করি। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরই বেশি এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি নতুন কোনো গাছ লাগাই, দেখা যায় গাছগুলো পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিয়ে যদি গাছগুলোর পরিচর্যা করেন তাহলে কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসে আরও বেশি সবুজায়ন করতে সক্ষম হবো।’

অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের উদ্ভিদের সার্বিক ভালোমন্দ দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য সংরক্ষণের জন্য শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত লোকজন এলে কিন্তু প্রকৃতি ঠিক থাকবে না, নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে, সবাই মিলে এটা সংরক্ষণ করতে হবে। সুতরাং, সবাই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করবে, গাছের সৌন্দর্য উপভোগ করবে, কিন্তু ফুল না ছিঁড়ে, গাছ ধ্বংস না করে। আর নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে চলাফেরা করতে হবে, এটা খুবই দরকার।’

ফুল-ছায়ায় সুশোভিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, ‘লনের মাঝখান দিয়ে চলাফেরা করলে সেখানে একটা রাস্তা হয়ে যাবে। তখন লনের সবুজ রংটা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে কিন্তু মলচত্বরে রাস্তার সেগমেন্ট করা হয়েছে। অনেক সময় নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে লনে প্রবেশ না করে গাছগুলো ক্রস করে অনেকে গাছ নষ্ট করে। এটা করা যাবে না।’

ড. মিহির লাল সাহা আরও বলেন, ‘যারা ক্যাম্পাসে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলো আমরা অনেক কষ্ট করে যত্ন করি। এগুলো নষ্ট করবেন না। গাছেরও জীবন আছে, এই জীবনের প্রতি একটা অনুভূতি দিয়ে যেন আমরা তাদের রক্ষা করি। আমাদের জীবন, তাদেরও জীবন। তাদের জীবনের সম্পূর্ণটাই কিন্তু একেবারেই আমাদের জন্য। তারা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের উপভোগের জন্য জীবন দিচ্ছে, ছায়া দিচ্ছে। এই বিষয়গুলো আমরা যদি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি তাহলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা রক্ষা করতে পারবো।’

হাসান আলী/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।