বুয়েট
‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’
বুয়েটে চলমান নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ও ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩১ মার্চ) সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদ জানান। পরীক্ষা বর্জনের বাইরে আজ শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই। বুয়েটের ইন্টারভাল-১৮ ব্যাচের পারভেজ আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা। আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই আমাদের অবস্থান কেবল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরোধী। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সেই জায়গা থেকে তাদের ক্যাম্পাসের ভেতর রাজনৈতিক চর্চায় জড়িতদের বিরোধিতা করে আসছে। বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে ঐদিন রাতে নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভেতর রাজনৈতিক নেতাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে।
আরও পড়ুন>>>
- বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ/তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: উপাচার্য
- ছাত্রলীগের সমাবেশ ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাসে মাইকিং
তারা বলেন, আমাদের ৬ দফা দাবির, প্রথম দাবিতে যার কথা উল্লেখ রয়েছে, ইমতিয়াজ রাব্বি, সে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদধারী এবং এর আগে সে তার পদ সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এই পরিচয় ব্যবহার করে। সে এবং তদসংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে তাহলে বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার- এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করি, জাতীয় দিনগুলোতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক উদযাপন ও অংশগ্রহণ এবং সম্যকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিই এর প্রমাণ। এটি প্রমাণ করার জন্য আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসের সব সাধারণ শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্তকে অবমাননা করে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই।
অপপ্রচারের জবাব দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, দ্বিতীয় যে আরেকটি ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমরা যেমন সক্রিয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তেমন সক্রিয় নই। উল্লেখ্য, ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহ্বায়ক কমিটি দেয় তখন তীব্র আন্দোলন হয়। কিন্তু সেই কমিটির সবাই প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিধায় কর্তৃপক্ষের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় ছিল না। ওইসময় আমাদের তৎকালীন র্যাগ ব্যাচের অফিসিয়াল পেজ থেকে দেওয়া বিবৃতির প্রমাণও রয়েছে। বর্তমানে হিযবুত তাহেরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না।
তারা আরও বলেন, আমাদের ইনস্টিটিউশনাল মেইলে হিযবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডাব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে জানানো হয়। এ ব্যাপারে ডিএসডাব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এদের বিরুদ্ধে পুলিশে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা হিযবুত তাহরীরের নিঃসন্দেহে বিপক্ষে এবং এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয় এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শিবির সংশ্লিষ্টতার জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিতভাবে আহ্বান জানাই এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। সে সময়ে ইন্টারভাল-১৮ এর ফেসবুক সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেওয়া হয় যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক জ থেকেও প্রচার করা হয়। আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন আছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাবো।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই প্রসঙ্গে আহ্বান জানাবো ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্টকে, যিনি দাবি করেছেন উনাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে। তিনি যেন প্রমাণসহ বুয়েটে শিবিরে যুক্তদের তালিকা প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষণিক নিষিদ্ধ করার দাবি জানাবো। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা নিষিদ্ধ। কমিটি দেওয়া ছাড়াও ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ সেখানে ৩টায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েটের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে কখনোই সম্মান করে নাই।
বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। শপথ করছি সব রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার।
হাসান আলী/এসআইটি/জেআইএম