বঙ্গবন্ধু কালজয়ী অনন্য সাধারণ বিশ্বনেতা: ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন মহান নেতা যিনি কোনো সময়ের মধ্যে আবদ্ধ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তিনি কালজয়ী অনন্য সাধারণ বিশ্বনেতা। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও তার সংগ্রামী জীবন, আদর্শ ও দর্শন টিকে থাকবে।

রোববার (১৭ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে’।

জাতির পিতার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপাচার্য বলেন, যে কোনো অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শৈশবকাল থেকেই প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি শৈশব থেকেই অসহায়, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যখন যেখানে, যেভাবে ছিলেন সেখানেই তিনি এদেশের মানুষের কথা ভাবতেন। এদেশের মানুষকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র উপহার দেওয়াই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্য। ক্রমাগত আন্দোলন, সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এবং আমাদের রাজনৈতিক, ভৌগলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছেন।

jagonews24

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনো বিভিন্ন চক্রান্ত ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে দেশবিরোধী অপশক্তি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

উপাচার্য আরও বলেন, এসব দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তরুণ সমাজসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষক, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই।

আলোচনা সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জাতির পিতার সাহসী, সংগ্রামী ও কর্মময় জীবনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আমাদের জন্য একটি স্বাধীন মানচিত্র দিয়ে গেছেন। জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং পরিবারকে বঞ্চিত করে তিনি দেশের মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা নিয়ে সবসময় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই অবিসংবাদিত ও ক্ষণজন্মা নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, চেতনা ও আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস শিশু, তরুণ প্রজন্মসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছারসহ অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরী কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।

jagonews24

আলোচনা সভা ছাড়াও আরও কিছু কর্মসূচি পালন করে ঢাবি প্রশাসন। দিবসটি উপলক্ষে সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন), প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এছাড়া, চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। এসময় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনসহ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। মোট তিনটি গ্রুপে এ প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নীলক্ষেত উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার শিশুরা অংশ নেয়।

এর আগে জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কেক কাটা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কেক কাটেন। দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়ায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং আবাসিক হল ও হোস্টেলের মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া, প্রার্থনা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এনএস/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।