জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা

একপাক্ষিক দোষী না ভেবে পুরো বিষয় জানার আহ্বান অভিযুক্ত সহপাঠীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৪
জবি শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ও ফাইরুজ অবন্তিকা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অভিযোগের বিষয়ে তার মতামত দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে আম্মান ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে এ বিষয়ে পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি আহ্বান জানান, একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয় চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার।

ওই পোস্টে রায়হান সিদ্দিকী আম্মান লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওনার (অবন্তিকা) সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেকটেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি অবন্তিকার মর্মান্তিক মৃত্যুতে। সবার কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু বিচার না করে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার জন্য। ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল। একটা ফেইক আইডি থেকে আমাদের ১৪ শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েক বন্ধুর কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদমূলক কথা ছিল।’

‘এমনকি অবন্তিকার নিজের নামও সেই টেক্সটের মধ্যে ছিল। যখন এমন মেসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যাই। সেখানে অবন্তী (অবন্তিকা) নিজেও উপস্থিত ছিল। জিডি করে ফেরার সময় অবন্তিকা স্বীকার করে যে ওই ফেইক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এই কাজ করেছে।’

রায়হান সিদ্দিকী আম্মান আরও লেখেন, ‘পরদিন কোতোয়ালি থানাকে আমরা জানাই যে, আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পরে থানা থেকে এসআই রুবেল অবন্তিকার বাসায় কল করেন। আঙ্কেলকে (অবন্তিকার বাবা) বলেন, আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন। আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি, যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।’

আরও পড়ুন

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘অবন্তিকার এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমাদের বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তিকার বাবা-মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তিকা এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেদিনই অবন্তিকার আম্মা আমাদের সবার সঙ্গে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকি সময়টা যেন আমরা মিলেমিশে পার করি। উনি (অবন্তিকার মা) ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান। এরপর আমি অবন্তিকার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি।’

‘আমার কাছে সব বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি এসব ডকুমেন্টস স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন। আর একটা প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না, মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিলো না ‘

‘আসলে ওই ঘটনার পরে ওর (অবন্তিকার) সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিল তারপরে আর তার সঙ্গে কোনো কথা-ই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিল। তার সঙ্গে আমি আজ পর্যন্ত ফেসবুকে বা অন্য কোনো মাধ্যমে কথা বলিনি’, যোগ করেন রায়হান সিদ্দিকী আম্মান।

তিনি আরও লেখেন, ‘দ্বীন ইসলাম স্যারের সঙ্গে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময়যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে স্যার আমার হয়ে অবন্তিকাকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারেন। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ-সরল মানুষ হিসেবেই চেনেন।

পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়, তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার অনুরোধ করেন আম্মান।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে ফেসবুকে ‘এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার’ স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। ওই পোস্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেন তিনি।

আরএএস/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।