যৌন হয়রানির অভিযোগ
ভিকারুননিসার সেই শিক্ষককে ‘বরখাস্ত না করতে’ সুপারিশ
কোচিংয়ের নামে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার (দিবা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে ‘বরখাস্ত না করতে’ সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
তোলপাড় সৃষ্টি করা এমন ঘটনার তদন্তের এক সুপারিশে কমিটি বলেছে, ‘পবিত্র হজ পালন করে আসার পর তিনি আর এ ধরনের ঘটনায় (যৌন হয়রানি) জড়াননি।’
২২ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে মোট সাতটি সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে সাত নম্বর সুপারিশে এমন বক্তব্য জানিয়েছে কমিটি। এ সুপারিশের একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।
প্রতিবেদনের ৭ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে তিনজন ছাত্রীর আনা অভিযোগের ঘটনাগুলো এক বছর আগের। তিনি পবিত্র হজ পালন করার পর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি (ছাত্রীদের ভাষ্যমতে) বিধায় তাকে বরখাস্ত না করে শেষবারের মতো সতর্ক করে অন্য শাখায় বদলি করা যেতে পারে। এছাড়া অভিযোগকারীরা উপযুক্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না।’
অবশ্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ‘এক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন’ করার সুপারিশ করেছে।
৭ ফেব্রুয়ারি মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভিকারুননিসা স্কুলের আজিমপুর শাখার প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কয়েকজন অভিভাবক। এরপর তা নিয়ে তদন্ত কমিটি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগমকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম ও ইংরেজি প্রভাতী শাখার শাখাপ্রধান শামসুন আরা সুলতানাকে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাবকদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের বিষয়ে কথা বলতে কমিটির আহ্বায়ক এবং এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। আরেকজন সদস্য এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে তদন্ত কমিটির এমন সুপারিশের কারণে এখন পর্যন্ত মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কারও করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে তাকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর সই করা অফিস আদেশে বলা হয়, ‘মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আপনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে আপনাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। আমাদের গভর্নিং বডি আছে। সেখানে সেটা উপস্থাপন করা হয়েছে। নিয়ম মেনেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে শিক্ষক মুরাদ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিভাবকরা।
সেখানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মুরাদ হোসেন সরকার দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়ে আসছিলেন। তার এ হীন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক যৌন হয়রানির শিকার না হয়। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে নিপীড়ক শিক্ষককে বহিষ্কার করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে এক ভুক্তভোগীর অভিভাবক বলেন, এ শিক্ষক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খুলতো না। এমন কাজগুলো তিনি কোচিং ও ক্লাসের শেষে করতেন। উনি সবসময় বলতেন, আমি তোমাদের বাবার মতো। বাবার মতো বলে বলে ম্যানিপুলেট করতেন।
এর আগে দুপুরে ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার সামনে মুরাদ হোসেনের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন অনেক অভিভাবকরাও। তারা সবাই মুরাদ হোসেনকে বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এএএইচ/জেডএইচ/