গবেষণায় দ্বিগুণ হলো সুপারফুড বিটরুটের ফলন
সুপারফুড ‘বিটরুট’র ফলন বৃদ্ধি বিষয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. হারুন অর রশিদ এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ফাতেমাতুল বুশরা।
বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপের অর্থায়নে গবেষণাটি করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থী বুশরা।
এ বিষয়ে বুশরা বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে আনা বিটরুটের জাত বোল্টার্ডি এবং দেশীয় দুইটি হাইব্রিড জাত হার্টবিট ও রেডবেবি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। তিনটি জাতেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপদ মাত্রার বিভিন্ন ডোজে জিব্বেরেলিন নামক গ্রোথ প্রোমোটার বা উদ্ভিদের বৃদ্ধিকারক হরমোন ও সুষম মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রোথ প্রোমোটার ব্যবহার করায় ফলন আশানুরূপ হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. হারুন বলেন, দেশে বিটরুটের গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১২ থেকে ১৫ টন। নিরাপদ মাত্রায় গ্রোথ প্রোমোটার ব্যবহার করে উক্ত তিনটি জাতের বিটরুটের গড় ফলন পাওয়া গেছে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন। সুষম মাত্রায় জৈব সার এবং গ্রোথ প্রোমোটার সহনশীল ও নিরাপদ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় এতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বলে জানান তিনি।
বিটরুট শীতকালীন একটি ফসল। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালে এ গবেষণাটি করা হয় এবং মোটামুটি ১১০ থেকে ১২০ দিনেই ফলন পাওয়া যায়।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) তথ্য মতে, ১০০ গ্রাম বিটরুট খেলে ৪৩ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে ৩% প্রোটিন, ১১% আঁশ বা ফাইবার, ৩% শর্করা, ৮% ভিটামিন সি, ৪% আয়রন, ১% ক্যালসিয়াম, ৯% পটাশিয়াম, ৩% সোডিয়াম, ৫% ভিটামিন বি৬, ৫% ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে এবং কোলেস্টেরল ও সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ ০%।
অধ্যাপক হারুন আরও যোগ করেন, বিটরুট একটি সুপারফুড। এতে প্রোটিন, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ উপাদান সবই রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। আয়রন থাকায় হাঁড়ের গঠন ভালো হয়। আঁশ বা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। বিটরুটের পাতাতেও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে। আমাদের দেশে কাঁচা পাতা খাওয়ার প্রচলন না থাকায় পাতা সেদ্ধ করে বা সবজি হিসেবে রান্না করে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে বলে জানান এ গবেষক।
পরিশেষে অধ্যাপক বলেন, পরবর্তীতে গবেষণাগারে গ্রোথ প্রোমোটার ব্যবহার করায় পুষ্টিগুণ কতটুকু বৃদ্ধি পেলো, মিষ্টতা কতটুকু বৃদ্ধি পেলো এসকল বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হবে।
এফএ/এমএস