জাবিতে গৃহবধূ ধর্ষণ: জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৫ দাবিতে সমাবেশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়ন করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা; যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল থেকে অছাত্রদের বের করার জন্য পাঁচ কর্মদিবসের সময় নিয়েছিল। সেই সময়ের চার কর্মদিবস অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাদের কাজ দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি করতে চান। আমরা আরও এক কর্মদিবস দেখবো, আমাদের দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায় বলেন, এই নিপীড়নের ঘটনায় ও তাদের প্রশ্রয়দানের পেছনে আছে বড় ধরনের সিন্ডিকেট। ক্যাম্পাস থেকে নিপীড়কদের বিতাড়ন, পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ ক্যাম্পাস উপহার দেওয়ার এবং দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে সব হিসেব-নিকেষ করার সময় এসেছে। আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।
রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট ক্যাটাগরির সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার সিহাব উদ্দিন বলেন, ব্যর্থ-নির্লিপ্ত ও উদাসীন প্রশসানের ব্যাপারে আমি খুবই সন্দিহান। বিশ্ববিদ্যালয় আজ মাদকে সয়লাব, ধর্ষণ-নিপীড়নের মতো ঘটনা সহসা ঘটছে। অথচ অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে টাকা-পয়সা ভাগাভাগিতে ব্যস্ত প্রশাসন। তাদের লজ্জা নেই। একটা নতুন ব্যাচকে ছয় মাসেও হলে উঠাতে পারেনি। এই সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত হয়ে বহু রথি-মহারথির পতন হয়েছে, বিদায় নিতে হয়েছে এই ক্যাম্পাস থেকে। হল থেকে অছাত্রদের বের করার নামে যে কার্যক্রম তা আইওয়াশ মাত্র। বিপ্লবের স্রোতে এসব আইওয়াশ ভেসে যাবে।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় এলিট ফোর্স যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছে, আমার মনে হয় অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে তারা কখনো এরকম বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন ব্যাখ্যা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়গুলো আগে থেকেই জানে।
তিনি আরও বলের, হল থেকে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার নামে তারা আমাদের চোখে ধুলো দিতে চাচ্ছে। ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী এখনো হলে অবস্থান করছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদককে তো আগে বের করে দিতে হবে। এই প্রশাসনের কোনো মেরুদণ্ড নেই।
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞাণ বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা কেউ নিপীড়ক হিসেবে ভর্তি হয়নি, মাদকাসক্ত বা ব্যবসায়ী হয়ে ভর্তি হয়নি। তাদের মাদকাসক্ত ও নিপীড়ক হওয়ার পেছনে প্রশাসনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই আজ তাদের এ অবস্থায় নিয়ে গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো বিচার হচ্ছে না। শিক্ষকের বিচার না হলে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হওয়ার সাহস পায়। প্রশাসন যদি সক্রিয় থাকতো, অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতো, তাহলে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটতো না।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক পারভীন জলি, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাবেক সভাপতি মাহি মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাথী মজুমদার ও সামি আল-জাহিদ প্রিতম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স ও সুস্মিতা মরিয়ম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমন ধ্রুব প্রমুখ।
মাহবুব সরদার/এমকেআর