ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
হলের কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এ ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যতদিন প্রশাসনের মদদে এ ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে, ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগ বাণিজ্য করবে, চাঁদাবাজি করবে ততদিন এ ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর সম্ভব নয়। আমরা অনেক বড় বড় উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা আপনাকেও বিতাড়িত করে ছাড়ব যদি আপনারা এদের বিচার না করেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধর্ষকদের ফাঁসি চাই, তাদের মদদদাতা প্রশাসনের পদত্যাগ চাই। ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এ ক্যাম্পাসে কোনো অবৈধ, সন্ত্রাসী, অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী থাকবে না। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব। যে সব হলে প্রাধ্যক্ষ অছাত্রদের দিয়ে হল চালায় প্রাধ্যক্ষ থাকতে পারবে না।’
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লা ভূঁইয়া বলেন, ‘এক বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও তার কোনো সঠিক বিচার হয়নি।এ ধর্ষণ কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয় প্রত্যেকটা ঘটনার সঙ্গে থাকে একটা যোগাযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অপরাধের বিচার হয় না।’
অন্যদিকে দুপুর ২টার দিকে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আলিফ আফিসান দীপ বলেন, ‘ধর্ষকের শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। আমরা কখনো একজন ধর্ষককে ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের অংশ বলে বিশ্বাস করি না। ধর্ষক কোনো দলের নয়, সংগঠনের নয়। ধর্ষকের স্থান জেলের অভ্যন্তরে, ধর্ষকের স্থান সর্বোচ্চ শাস্তির মানদণ্ডে। আমরা বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার দ্রুত শাস্তি নিশ্চিতের জোরালো দাবি জানাই। কোনো ধর্ষকের স্থান এ ক্যাম্পাসে নেই।’
বিকেল ৩টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছত্রছাত্রায় বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজে লিপ্ত হয়েছে। এ দায় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বাদী হয়ে মাaমলা করেনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, গত কয়েক বছরে ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপরাধগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অছাত্ররাই মূলত এসব করছে। তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে প্রশাসন এদের কোনো বিচার করে না। বারবার দায়মুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। দায়মুক্তির কারণে তারা এ ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসের একটা অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।
এর আগে, শনিবার (৩ ফেরুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী। তার প্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মাহবুব সরদার/আরএইচ/এমএস