রাবির নির্মাণ প্রকল্পে দু’বছরে চার মৃত্যু, দায় কার?

মনির হোসেন মাহিন মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি
প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৪
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে গত দুই বছরে এক শিক্ষার্থীসহ ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে এসব মৃত্যুর দায় কার, এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০তলা বিশিষ্ট এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান হলে দায়িত্ব পালনকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইউনুস আলী নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার মির্জাপুর এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে।

এছাড়াও মে মাসের ৩১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ২০তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিক ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাগর নামে এক নির্মাণ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার আদপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

এর আগের বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পাথরবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল। তার বাড়ি নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায়। ওই একই বছরের ৮ জানুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আলেক আলী নামে আরেক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

এক বছরে তিন শ্রমিক ও এক শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নির্মাণ প্রকল্প। এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দায়ভার কার এমন প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি অসাবধানতা ও সেইফটি সরঞ্জামাদির অভাবেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না করেই তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এবং জীবন রক্ষার জন্য কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কোনো চিন্তা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এহসানুল হক মিলন বলেন, প্রতিবছরই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পেছনে নির্মাণ শ্রমিকদের সাবধানতার অভাব ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই মৃত্যুগুলোর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে গেলেও চলবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেই উদাসীন, সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের দেখভালের জন্য তারা দায়িত্বশীল কীভাবে হবে। অন্যদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফার লোভে অনেক সময়ই পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে না। ফলে মৃত্যুর ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর কেন আরেক শ্রমিকের মৃত্যু হলো? একজনের মৃত্যুর পর কেন তারা সতর্কতা অবলম্বন করলো না? এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঠিকাদারদের সমান দায়ভার রয়েছে। এ মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী।

শিক্ষার্থীদের এসব দায় অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির ডিপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম জানান, যত রকম নিরাপত্তা প্রয়োজন তার সবরকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজের কারিকুলামের বাইরে গিয়ে কাজ করায় সাগর নামের ওই শ্রমিকের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের আরও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে কোম্পানি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা কাউকে বলে আসে না। এটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। তারপরও এটা মানতে হবে যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ভুল আছে। তাছাড়া যারা শ্রমিক তাদেরও কিছু অসতর্কতা রয়েছে। শ্রমিকদের উচিত আরও সতর্ক হওয়া।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এরকম দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য আমরা ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মিটিংয়ে তাদেরকে আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনাও দিয়েছি। আশা করি পরবর্তীতে এরকম ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হবে না।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।