পানিতে আয়রন, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শাবিপ্রবির নতুন হলের ছাত্রীরা
অতিরিক্ত আয়রনের কারণে নিরাপদ পানির চরম সংকটে ভুগছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রীরা। পানির প্লান্ট না বসিয়ে মাটির গভীর থেকে সরাসরি পানি সরবরাহ করার কারণে ছাত্রীরা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কবে নাগাদ পানির প্লান্ট বসানো হবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. চন্দ্রানী নাগ। ফলে আয়রনযুক্ত হলুদ রঙের পানিই এখন ছাত্রীদের একমাত্র ভরসা।
ছাত্রীদের অভিযোগ, খাবার পানি ব্যাতীত রান্নাবান্না, গোসল, শৌচকর্ম, কাপড়-চোপড় ধোয়াসহ সকল কাজে এ পানি ব্যবহার করছেন ছাত্রীরা। নিয়মিত এ পানি ব্যবহার করার কারণে ছাত্রীদের চুলপড়া, শরীরে চুলকানি, এলার্জি ও ত্বক নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানান স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা। এ নিয়ে হল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এদিকে আয়রনযুক্ত হলুদ পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় হলের কিছু ছাত্রী ফিল্টারের পানি দিয়ে গোসল করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হচ্ছে পানির ফিল্টার। এ নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন হলের প্রভোস্ট।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের যাতে পানিবাহিত কোনো রোগ যেমন টাইফয়েড, জন্ডিস ও ডায়রিয়া না হয় সেজন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কিছু ছাত্রী ফিল্টারের পানি দিয়ে গোসল করে, কাপড় ও বাসন-কোসন পরিষ্কার করে। তাই ফিল্টারের অপব্যবহার না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, হলের পানির খুবই বাজে অবস্থা। ট্যাপ দিয়ে হলুদ রঙের পানি আসে। শরীর ও মাথা প্রচণ্ড চুলকানোর ফলে ত্বকে সমস্যা হচ্ছে।
আয়রনযুক্ত পানির বিষয়ে কী কী সমস্যা হতে পারে এ বিষয়ে সিলেটের ‘অফিস অব দ্যা ডিরেক্টর অব হেলথ’র বিভাগীয় পরিচালক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, পানিতে অতিরিক্ত আয়রন থাকলে হজমে সমস্যা ও পেটে ব্যথা হতে পারে। এ পানি দিয়ে কাপড়-চোপড় ধুলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট ড. চন্দ্রানী নাগ জাগো নিউজকে বলেন, হলে পানির প্লান্ট বসানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে।
প্লান্ট বসানোর আগে পানির এ সমস্যা দূরীকরণে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেই বলেও জানান তিনি। তবে ছাত্রীদের কোনো সমস্যা হলে প্রভোস্টকে অবগত করার কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি জায়গায় প্লান্ট বসানো আছে। এর মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলী হল ও শাহপরান হলে আধুনিক পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া শাহজালাল ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে পুরাতন একটি প্লান্ট বসানো আছে যা থেকে প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা হলসহ আরও কয়েকটি জায়গায় পানি সরবরাহ হয়। প্লান্ট পুরাতন হওয়ায় এ প্লান্টের আওতাভুক্ত জায়গায় নোংরা পানি, পানিতে গন্ধসহ পোকামাকড়ও আসে। এসব পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন হলের ছাত্রীরাসহ সংশ্লিষ্টরা। নবনির্মিত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল কোনো প্লান্টের আওতায় না থাকায় সরাসরি ডিপ কল দিয়ে মাটির গভীর থেকেই পানি আসে।
এফএ/এমএস