হলের বারান্দায় আবিদের শখের বাগানে ৭০ প্রজাতির গাছ

মনির হোসেন মাহিন মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি
প্রকাশিত: ০৫:৪৬ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩

প্রকৃতি ও গাছপালা প্রত্যেক মানুষকেই কাছে টানে। প্রতিটি মানুষ প্রকৃতি, গাছপালা, ফুল-ফলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ভালোবাসে। এর মধ্যে কিছু মানুষ সেই সৌন্দর্য্য গড়ে তোলেন নিজের হাতে। গাছ ভালোবেসে রুমের সামনে হলের বারান্দায় এমনই এক শখের বাগান গড়ে তুলেছেন আবিদ হাসান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবিদ হাসানের এই শখের বাগানে রয়েছে ৭০ প্রজাতির গাছ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের দ্বিতীয় ব্লকের তৃতীয় তলায় থাকেন। তার রুমের সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকায় ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। বাগানে গাছের সংখ্যা প্রায় শতাধিক ছাড়িয়েছে।

আবিদের বাগানে যেতেই সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। তার রুমে যেদিকে চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। সবুজের স্নিগ্ধতায় ছেয়ে গেছে আবিদের সাজানো বাগান। বারান্দার চারপাশের বেলকোনিতেও ঝুলছে লতাপাতা।

তার এই বাগানে রয়েছে ৬-৭ প্রজাতির ক্যাকটাস, মাদার অব থাউজ্যান্ড, কাটা মুকুট, লজ্জাবতী, মানি প্লান্ট, ইঞ্চি প্লান্ট, পার্পাল হার্ট, অ্যালোভেরা, তুলশী, নয়নতারা, বট গাছ, পাথরকুচি, রজনীগন্ধা, পুত্তুলিকা, স্পাইডার প্লান্ট, পিংক স্পাইডার, হার্ট অব জেসুস, এরো হেড প্লান্ট, ড্রেসিনা (সর্প গাছ), জেব্রিনা প্লান্ট, ট্রটেল, অপরাজিতা, জবা, গাঁদা, গোলাপ, বাগানবিলাসসহ নাম না জানা আরও অনেক প্রজাতির গাছ।

গাছের প্রতি আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে আবিদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গাছ লাগানো ছোটবেলা থেকেই আমার পছন্দ। প্রতি বর্ষায় আমাদের বাড়িতে আব্বু অনেক বৃক্ষরোপণ করতেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকতাম আমি আর আমার ছোট দুই ভাই। আমাদের বাড়িতে প্রায় ২৫-৩০ রকমের দেশি-বিদেশি ফলগাছ আছে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে যখন হলে উঠি তখন থেকেই আমার রুমের সামনে ২-৩টা গাছের টব ছিল। একটা টবে অ্যালোভেরা আরেকটাতে মাদার অব থাউজ্যান্ড ছিলো। শুরুতেই রুমের সামনে গাছ পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগে এবং সেগুলোর নিয়মিত যত্ন নেওয়া শুরু করি৷

তিনি আরও বলেন, গাছ আমার একাকিত্বের সবচেয়ে বড় বন্ধু। সারাদিন ক্লাস করে যখন রুমে ফিরতাম তখন নিজেকে খুব একা মনে হতো, বাগানটা যখন হয়ে গেলো তখন আর সেটা মনে হয়নি। গাছগুলোর কাছে বসে গল্পের বই আর পত্রিকা পড়তে আমার দারুণ লাগে। চোখের সামনে যখন গাছগুলো বড় হয়, বিশেষ করে যখন ফুলগাছে ফুল আসে হৃদয়ের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায় সেই আনন্দ।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ২টি গাছের যত্ন নিতে নিতেই মনে হলো আরও গাছ লাগানো যেতে পারে। তখন থেকেই হলের রুমের সামনে আরও গাছ লাগানোর চিন্তা করতে থাকি। কিন্তু কীভাবে গাছ সংগ্রহ করবো? টব কেনা, মাটি সংগ্রহ এবং গাছ কিনতে হলেও টাকার প্রয়োজন। একদিন একজনের রুমের সামনে দেখলাম প্লাস্টিকের পরিত্যাক্ত বালতিতে গাছ লাগানো। তখন থেকেই মনে হলো আমিও শুরু করতে পারি। সকল সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে আমি আমার শখের কাজটি করতে থাকি।

বাগান করতে আমাকে সবথেকে বেশি সহায়তা করেছেন আমাদের হলের মালি কালাম ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা আমাকে গাছের পরিচর্যার জন্য গোবর, সার, মাটিসহ অনেকগুলো নতুন জাতের চারা এবং বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দিলেন। এছাড়াও কিছু কিছু গাছ একাডেমিক ভবনের মালিদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও বন্ধু, ছোট-বড় ভাইরাও অনুপ্রাণিত করেছে অনেক। বর্তমানে প্রায় ৭০ প্রজাতির গাছ ও প্রায় শতাধিক গাছ রয়েছে আমার বাগানে।

গাছের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আবিদ বলেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গাছে পানি দিয়ে আমার দিন শুরু হয়। অবসরেই গাছের যত্ন নিতে পরি, এতে আমার কোনো কাজের ক্ষতি হয় না। গাছগুলোর সঙ্গে সময় কাটানোটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ।

তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা এবং অনেক প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে পারি। আমাদের সকলের উচিত নিজে বৃক্ষরোপণ করা এবং আশপাশের সকলকে এই কাজে উদ্ভুদ্ধ করা।

আবিদের বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ সৈকত জাগো নিউজকে বলেন, আবিদ হাসানের বাগান করা দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আমি আমার রুমে পড়ার টেবিলের পাশে একটি ইনডোর গাছের বাগান করি। গত ৮ মাস যাবত গড়ে ওঠা এই বাগানে প্রায় ৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। পড়ার টেবিলের পাশের এই বাগান আমায় ইট পাথরের চার দেওয়ালের মাঝে প্রকৃতির ছোঁয়া দেয়।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।