জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘চাঁদা’ না পেয়ে ২৩ লেগুনা আটকে রাখার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৩টি লেগুনা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ার জেরে লেগুনাগুলোকে আটক রাখা হয়েছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল-ফারুক ইমরান, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব এবং উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল-রাজি সরকার প্রমুখ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে যান। রাতে লেগুনা মালিক সমিতির কয়েকজন নেতা এলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ১১টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপর বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেলে আরও ১২টি লেগুনা আটকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে আসেন তারা। মোট ২৩টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে রাখা হয়েছে।

jagonews24

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে সারি করে রাখা হয়েছে লেগুনাগুলোকে। কয়েকজন চালক জানান, দিনে তাদের ১০০০-১৫০০ টাকা আয় হয়। তিনদিন ধরে লেগুনা আটকে রাখায় পুরোপুরি উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন তারা।

তবে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে লেগুনাগুলো ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

লেগুনা চালক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের আগে দৈনিক ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতেন সাভার-আশুলিয়া রুটের প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা চালক। তবে গত দুমাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ আছে। আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চান ছাত্রলীগ নেতারা। এবার লেগুনাপ্রতি ১০০ টাকা দাবি করেছেন নেতারা। তবে তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিকপক্ষ। তাই লেগুনা আটকে রাখা হয়েছে।

তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী একটি লেগুনা সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচ ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র তানভীর ও তারেকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। তাই তিনটি লেগুনা আটকে রাখা হয়। তবে চালকরা নকল চাবি দিয়ে সেগুলো নিয়ে চলে যান। এরপর ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটক করেছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকা হলেও তারা আসছেন না।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, ‘আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। পরে তিনটি লেগুনা আটকে রাখি, তবে তারা কিছু না বলেই নকল চাবি দিয়ে লেগুনাগুলো চালিয়ে নিয়ে যান।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হলের ছোট ভাইয়েরা লেগুনাগুলো আটকায়। তাই মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকেছি, তবে তারা আসেনি। মালিকপক্ষ না এলে কাদের কাছে গাড়িগুলো দেবো?’

jagonews24

সহ-সভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘হলের দুই ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। তাই তাদের দাবি অনুযায়ী লেগুনাগুলো আটকানো হয়েছে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ছাত্ররা লেগুনাগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে শুরু করলে আমরা বাধা দেই। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারিনি। বিষয়টি যেহেতু ছাত্র-সংশ্লিষ্ট তাই প্রক্টরকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।

মাহবুব সরদার/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।