ডেঙ্গুর প্রকোপ
মশা নিধনে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি চবি
সন্ধ্যা হলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মশার উৎপাত বেড়ে যায়। ড্রেনে জমে থাকা পানি এবং অসংখ্য ঝোপঝাড়ের কারণে এখানে মশার প্রকোপ বেশি। তার ওপর যত্রতত্র ফেলে রাখা ময়লা নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে বেড়ে গেছে মশার আবাসস্থল।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়েও। তাই শিক্ষার্থীদের মাঝেও বাড়ছে আতংক। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন। তবে এতো কিছুর পরেও মশা নিধনে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ড্রেনে কিছু দূর পরপর জমে আছে পচা পানি। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় মশার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও ঝুপড়ির পেছনের ময়লার ভাগাড়, হোটেলের পেছনের ময়লার স্তূপ, হলের আশপাশে জমে থাকা জমাট পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। হলের অপরিচ্ছন্ন বাথরুম এবং খাবারের ডাইনিং থেকে ফেলা উচ্ছিষ্ট থেকেও জন্মাচ্ছে মশা।
আরও পড়ুন: এডিস মশা নিধনে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান শিক্ষক সমিতির
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বর, জিরো পয়েন্ট, শহীদ মিনার, লেডিস ঝুপড়ি, সেন্ট্রাল ফিল্ড এ আড্ডা দিতে বসা শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। তাছাড়া কলা ঝুপড়িতে দিনের বেলাতেও চলে মশার অত্যাচার। এদিকে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা উল্লেখ করে গত ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এডিশ মশা নিধন কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। তবে এখনো প্রশাসনকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ছিটানো হয়নি মশার কোনো ওষুধ।
শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বড়ুয়া জাগো নিউজকে জানান, রুমের পাশের পরিবেশ খুবই অপরিচ্ছন্ন। হল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অপরিষ্কার পরিবেশ থাকায় দিন দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। আগে রাতের বেলা এর উপদ্রব বেশি থাকতো। কিন্তু এখন দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় রুমে থাকা যাচ্ছে না।
আমানত হলের শিক্ষার্থী অনুপম বলেন, কয়েক দিন আগে আমার রুমমেট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। হলে রাতে অনেক মশা কামড়ায়। হলের ওয়াশরুম গুলো খুবই নোংরা। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। যার কারণে ময়লা পানি জমে থাকে। এছাড়া হলের আশপাশে যত্রতত্র ময়লা স্তূপ হয়ে জমে আছে। এসব জায়গা থেকেই জন্ম নিচ্ছে মশা। মশা তাড়াতে প্রশাসনকে সতর্কতামূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি যা লজ্জার।
শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট প্রফেসর নির্মল কুমার সাহা জাগো নিউজ কে বলেন, ওষুধের জন্য আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবে। তবে হলের পক্ষ থেকে মশার উপদ্রব স্থলে আমরা কেরোসিন ছিটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হল অপরিচ্ছন্ন থাকা নিয়ে তিনি বলেন, হলে পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে মাত্র চারজন অথচ শিক্ষার্থী ৭০০ এর অধিক। এতো স্বল্প কর্মী দিয়ে পুরো হল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা কষ্টকর। তারপরও যতটুকু করা যায় আমরা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। আশাকরি পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না।
এ ব্যাপারে চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার জাগো নিউজকে জানান, মশা নিধনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি উনার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদ জানান, আমি মশা নিধনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কয়েক দিন আগে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। আমি এ ব্যাপারে আবার যোগাযোগ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব জাগো নিউজকে বলেন, মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। যদিও মেডিকেলে এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো শিক্ষার্থী পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী দুজন পেয়েছিলাম। তবে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে৷ চবিতে অতিরিক্ত বন-জঙ্গল, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, জমে থাকা পানির কারণে মশার বংশবিস্তার বেশি ঘটে। এগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হতে হবে।
আহমেদ জুনাইদ/আরএইচ/জিকেএস