কাঁকড়া চাষে নোবিপ্রবি উদ্ভাবিত সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার
কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিবছর দেশের অর্থনীতিতে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার যোগ হচ্ছে। কিন্তু কাঁকড়া চাষের জন্য আমাদের চাষিদের পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়।
চাষিরা সাধারণত বিভিন্ন উপকূলীয় মোহনা এলাকা ও ম্যানগ্রোভ এলাকা থেকে কিশোর কাঁকড়া আহরণ করে তা মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। এছাড়া নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষ ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত আহরণের মহোৎসব চলছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
গবেষকরা বলছেন, কাঁকড়া মোটাতাজাকরণে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের মাছ কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন যা সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রিত নয়। এর ফলে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধিও পান না।
কাঁকড়া চাষের ক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধান চিংড়ির মতো হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন ও চাষে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার। এ দুইয়ের সমন্বয় সাধনে ১০০ জন কাঁকড়া চাষিকে নিয়ে সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কাঁকড়ার পোনা নার্সিং ও মোটাতাজাকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটি কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরায় চলছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ। প্রকল্পে প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুন। এতে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়,
গ্লোব অ্যাগ্রো লিমিটেড ও ইরাওয়াব ট্রেডিং।
ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বেসরকারি হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন করা হয়। প্রথমপর্যায়ে প্রথম ব্যাচে উৎপাদিত প্রায় ২০ হাজার পোনা কক্সবাজারের ১৩ কাঁকড়া চাষিকে সরবরাহ করা হয়। এসব পোনা নার্সিং ও চাষাবাদে নোবিপ্রবি উদ্ভাবিত সম্পূরক খাদ্যও চাষিদের সরবরাহ করা হয়। এর আগে কাঁকড়ার এই সম্পূরক খাদ্য উদ্ভাবন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুন।
এদিকে, শনিবার (১৮ মার্চ) চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করা কাঁকড়ার প্রথম আহরণ উপলক্ষে টেকনাফের মিনাবাজারে মাঠ দিবস কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান। এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি মাহবুবুল হক প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কাঁকড়া ব্লু ইকোনোমি ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি গবেষকদের চাষিবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুন বলেন, হ্যাচারির পোনা ও সম্পূরক খাবার দিয়ে কাঁকড়া উৎপাদন বাংলাদেশের উপকূলীয় মৎস্য চাষে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি উদোক্তাদের প্রযুক্তি সম্প্রসারণে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে শতাধিক মৎস্যচাষি, সুফলভোগী চাষিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। পরে মহাপরিচালক ও অন্যরা চাষিদের কাঁকড়া আহরণ কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
এমআরআর/জেআইএম