নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
দায়সারা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু-নীলদল’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু-নীলদল’। নীলদলের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ। এ নির্বাচনে দুই বছর মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ড. সেলিম আল মামুন নির্বাচিত হন। এছাড়াও বিভিন্ন পদে ১৫ শিক্ষক নির্বাচিত হন। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি এ কমিটি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যু দিবস থেকে শুরু করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো দিবসেও তাদের কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, মার্চ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন ও ৩১ মার্চের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
এছাড়াও বলা আছে, কার্যনির্বাহী পরিষদ প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি সভা আহ্বান করে শিক্ষক সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও পরিস্থিতি মূল্যায়নপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যেটি নিয়মিতভাবে করা হয় না বলে জানা গেছে। এছাড়াও গত দুই বছরে একটিও সাধারণ সভা করেনি সংগঠনটি। অথচ গঠনতন্ত্রে প্রতি তিনমাসে একটি সাধারণ সভা করার কথা বলা আছে।
আরও পড়ুন: যে বটগাছ ঘিরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, সেটিই আজ সীমানার বাইরে
ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, গ্রুপিংয়ের কারণে স্থবির হয়ে আছে নীলদলের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং নীলদলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য আসিফ ইকবাল আরিফ বলেন, ‘বর্তমান কমিটি গত দুই বছরে একটিও সাধারণ সভার আয়োজন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের অধীনে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুজিববর্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদযাপনের মতো ব্যাপারেও এই কমিটি কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি। যেটি আমাদের জন্য আসলেই হতাশাজনক।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার বলেও নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে প্রার্থিতা চেয়ে আমি চিঠিও দিয়েছিলাম। তারও জবাব পাইনি। বর্তমান নেতৃত্ব মূলত ১৮০ জনেরও অধিক শিক্ষকের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীলদল মনোনীত প্রার্থী দেওয়ার কথা গঠনতন্ত্রে থাকলেও তার কোনো বাস্তবতা লক্ষ্য করা যায়নি৷ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে লড়াই করা দুটি প্যানেলের সবাই ‘নীলদল অনুসারী শিক্ষক’ বলে চালিয়েছে। উজ্জ্বল-সেলিমের নেতৃত্বে এই কার্যনির্বাহী কমিটি তাদের দুই বছর সময়ে নতুন কোনো সদস্যও যুক্ত করতে পারেনি।
নীলদলের স্থবিরতা নিয়ে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ড. সৈয়দ মামুন রেজা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সভা আহ্বান করে থাকে সাধারণ সম্পাদক। আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সভা আহ্বান করতে বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রায় দুইশ জন শিক্ষকের একটি বৃহৎ সংগঠন হিসেবে দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করে হলেও ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত ছিল। দলমত থাকলেও ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল। সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকা দরকার ছিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। তাদের ভিতরে হয়তো কোনো দূরত্ব আছে।
অভিযোগের বিষয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, এবিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। সাধারণ সম্পাদকের কাছে জিজ্ঞেস করেন।
নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় হবে। সাধারণ সভা কবে হবে- এ প্রশ্নের জবাবে ড. উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসেই সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সভা আহ্বান করতে বলেছি।
এসব বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম আল মামুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। নীলদলের বিষয়ে প্রশ্ন শোনামাত্রই তিনি ‘সভাপতির কাছে যান’ বলে ফোন কেটে দেন।
আহসান হাবীব/আরএইচ/এএসএম