অভিযুক্তরা হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে: নির্যাতিতা ছাত্রী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। তারা আমার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বলেছি, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে।’
আপনি তাদের দেখে ভয় পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ভয় পাইনি।’
আরও পড়ুন: গোপনে ক্যাম্পাসে এলেন ৫ অভিযুক্ত, বললেন না কিছুই
নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বাবা বলেন, কাজ না করলে আমাদের পেট চলে না। এরই মাঝে আসা-যাওয়ার খরচ। এভাবে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করতে করতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, সেদিনের ঘটনার পর আজসহ চারবার আসলাম। প্রতিবার আসতে ও যেতে প্রায় চার ঘণ্টা করে আট ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া প্রতিবার ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়, যা আমার জন্য কষ্টকর। আমি তো আর প্রশাসনকে বলতে পারি না যে এখানে থাকবো। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে তাহলে ভালো হয়।
এর আগে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের ডাকে বাবার সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও জয়শ্রী সেন ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে ভুক্তভোগীকে হলে নিয়ে যান।
তখন ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমার শরীরের অবস্থা খুব ভালো নয়, আবার খারাপও না। তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। তদন্তের স্বার্থে যতবার ডাকবে ততবার আসবো। তবুও অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
আরও পড়ুন: ইবির সেই ছাত্রী অসুস্থ, হল প্রশাসনের ডাকে ফের এলেন ক্যাম্পাসে
এদিকে, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। এসময় তারা প্রক্টর অফিসে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে দুপুর ১টার দিকে তারা হলে যান। সেখানে হল কমিটি ও হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে যান তারা।
সহকারী প্রক্টর সাজ্জাদুর রহমান টিটু বলেন, আমরা ভুক্তভোগীকে নিরাপত্তা দিয়ে আলাউদ্দিন নগর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। পরে তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাসায় যান।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও সাত-আটজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন: ইবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন
এছাড়া এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনলে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মাঝে গত শনি ও সোমবার ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের তদন্ত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার আবারও ক্যাম্পাসে আসেন পাঁচ অভিযুক্ত।
রুমি নোমান/এমআরআর/জিকেএস