জাবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প

‘রাতের যোগাযোগে’ আন্দোলনকারীদের অবরোধ মিটিংয়ে নিষ্পত্তি

মাহবুব সরদার
মাহবুব সরদার মাহবুব সরদার , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক,জাবি
প্রকাশিত: ০৭:১৯ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০২২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অফিস অবরোধের ঘোষণা দুইদিন আগে দিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদেরও জানিয়েছিলেন মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় অবরোধ হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে চোখে পড়েনি অবরোধ কার্যক্রম।

তবে ঘণ্টাখানেক পর একটি মিছিল গিয়ে পৌঁছায় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অফিসে। মিনিট দশেক স্লোগানের পর উপাচার্য অফিসে যায় মিছিলটি। সেখানে উপাচার্যের সঙ্গে মিটিংয়ের মধ্য দিয়েই শেষ হয় অবরোধ কর্মসূচি। কিন্তু প্রগতিশীল কয়েকটি সংগঠন যে আন্দোলনে জড়িত সেই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি এতো সহজে পাল্টে যায় কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাঠে নামে জাগো নিউজ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমবার (৭ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতার ‘ছোটখাটো যোগাযোগে’ পাল্টে যায় পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি। তবে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি জানেন না অবরোধে একাত্মতা পোষণকারী অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অবরোধ কেন হলো না- এমন প্রশ্নে জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা অবরোধ রাখতে চাইছি, (অবরোধ) ফলপ্রসূ করতে চাইছি। কিন্তু সংকটের জায়গাটা হচ্ছে যে, উপাচার্যের কাছে যেহেতু আমরা আলাপটা চালিয়ে যেতে পারি, তাই ঘেরাওয়ের জায়গাটা ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে এরপর ভিসি অফিসে গিয়ে মিটিংটা করি, যাতে সংকটটা আশু সমাধানের দিকে নেওয়া যায়।’

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অমর্ত্য রায় বলেন, ‘কালকে রাতে আমাদের একটা ছোটখাটো যোগাযোগ হইছে প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে। তাদের (প্রশাসন) কথা হচ্ছে— ভিসি স্যার তো আলাপ করতে চান। ভিসি স্যার যেহেতু আলাপটা করতে চান, তাহলে আমি বললাম ওকে, ঠিক আছে। তাহলে আমরা প্রকল্প অফিস (মিছিল নিয়ে) গিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বা ২০ মিনিট থেকে আপনাদের সঙ্গে আলাপটা (মিটিং) করতে আগ্রহী।’

এই অবরোধ কর্মসূচির নামে হওয়া মিছিলে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে অংশ নেয় জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা।

প্রশাসনের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ‘সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্তের আলোকেই অবরোধ কর্মসূচি ছিল। আর উপাচার্যের সঙ্গে মিটিংয়ের বিষয়টি ছিল তাৎক্ষণিক। আগেভাগে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেছে কি না- তা জানা নেই। তবে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস থেকেই এ আন্দোলন, সেখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে উপর মহলের সঙ্গে কারও যোগাযোগ করাটা আসলে আমাদের জন্য সংকটের। সেটা আমাদের আদর্শিক যে চিন্তাভাবনা সেটার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।’

একই প্রশ্নে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবির শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সে করে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা সবাই একত্রে একটা মুভমেন্টের সঙ্গে আছি, একটা আন্দোলনের মন্ত্র থেকে এগোচ্ছি । এখন কোনো ব্যক্তি যদি এই আন্দোলনের পক্ষ থেকে উপরে (প্রশাসন) যোগাযোগ করে তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’

কনোজ কান্তি রায় আরও বলেন, ‘জমায়েত হওয়ার পর আমরা এ সিদ্ধান্ত নেই যে, ক্লাস চলাকালে এ অবরোধ করে একটা আন্দোলন তৈরি থেকে যদি আলোচনার মধ্যেই সিদ্ধান্তে আসা যায়। এছাড়া আন্দোলন-কর্মী যারা আছেন সবাই একাডেমিক ব্যস্ততার মধ্যেই আছেন সে কারণে এটা (অবরোধ বাতিল) করতে হয়েছে।’

ছাত্র ফ্রন্টের এ নেতা বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের আগ পর্যন্ত পরবর্তী কাজ চালানো যাবে না এমন দাবিতে প্রশাসন একমত হয়েছে। তৃতীয় ধাপের কাজ শুরুর আগে আমাদের সঙ্গে বসা এবং সবার সঙ্গে মিলেই পরবর্তী পরিকল্পনা করবেন। দ্বিতীয় ধাপের যে কাজ চলছে তা চলমান থাকবে।’

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, তারা মিটিংয়ে বসেছে। মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে তাদেরকে বলেছি, আমাদের স্থপতি ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে তোমাদের জানাবো।

এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।