জাবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের কোন্দলে ৭ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার
খেলার মাঠে ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব হয়। এর জেরে মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের ৭ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনা অধিকতর তদন্তে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (৬ আগস্ট) শৃঙ্খলা কমিটির এক বৈঠকে এ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয় বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) ওই মারধরের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী সজীব হাসান সাজ।
প্রক্টর বলেন, ওই ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটি ৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ঘটনা অধিকতর তদন্তে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিবেদনের আলোকে সিন্ডিকেট সভায় তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রক্টর আরও বলেন, সাময়িক বহিষ্কারাদেশ থাকা অবস্থায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। এ সময় তারা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবেন না।
সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রাপ্তরা হলেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সাগর, তোফায়েল আহমেদ গালিব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কামরুল হোসেন চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের খালিদ হাসান ধ্রুব, সৌরভ, মার্কেটিং বিভাগের খালিদ সাইফুল্লাহ এবং ইংরেজি বিভাগের শাহরিয়ার হিমেল। তারা সবাই ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
তবে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রাপ্ত শাহরিয়ার হিমেল জাগো নিউজকে বলেন, মারধরের ঘটনায় আমি কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না। মারধরের সময় আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু অভিযোগপত্রে তারা আমার নাম দিল। আর সেই একপাক্ষিক অভিযোগের ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর কোনো নোটিস না দিয়েই প্রশাসন আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করলো। এতে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকেলে খেলার মাঠে ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন বটতলা এলাকায় অবস্থান নেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই দিন বিকেলে খেলার মাঠে মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ কাপালির সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগকর্মী খালিদের ধাক্কা লাগে এবং খেলার মাঠে একদফা মারামারি হয়। এই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাসানী হল আক্রমণের উদ্দেশ্যে বটতলায় অবস্থান নেন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই এলাাকার বৈদ্যুতিক বাতি ভেঙে এক ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেন। ঘটনাস্থলে তাদের হাতে লাঠি, রড এবং দেশীয় অস্ত্র বহন করতে দেখা যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা এই অবস্থা চলমান থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে তারা হলে ফিরে যান।
এই ঘটনার রেশ ধরে শুক্রবার বিকেলে মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী সাজ দুইজন অতিথিসহ মোটরবাইক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হলের সামনে গেলে হঠাৎ মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী তাদের মারধর করেন বলে লিখিত অভিযোগে বর্ণনা করেন সাজ।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, দুই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি জড়িত থাকায় দ্রুত সময়ে শৃঙ্খলা কমিটি সভা ডেকে ওই শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মাহবুব সরদার/এফএ/এমএস