রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়াই সুরক্ষিত থাকবে ফসল: গবেষণা
কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশকের কারণে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বিষয়টি উদ্বেগের হওয়ায় দিন দিন অর্গানিক ফসলের চাহিদা বাড়ছে।
এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করেই ফসলক সুরক্ষিত রাখার উপায় নিয়ে গবেষণা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সালেহা খাতুন রিপ্তা। প্রায় ছয় মাস ধরে বেগুনের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা নিয়ে এ গবেষণা চালান তিনি।
সালেহা খাতুন বলেন, গাছের উচ্চতা, পাতার আকার, পাতার সংখ্যা, পোকামুক্ত শাখা, পোকা আক্রান্ত শাখা, পোকামুক্ত ফল, পোকা আক্রান্ত ফল, পোকা আক্রান্ত ফলে পোকার শূককীটের সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভেষজ কীটনাশক হিসেবে নিম, মেহগনি, করঞ্জা, রসুনের নির্যাস নিয়ে প্রয়োগ করে অর্গানিক উপায়ে পোকার আক্রমণ অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব। এতে পরিবেশে ক্ষতিকর কেমিক্যাল উন্মুক্ত হয় না।
গবেষণার সুবিধার্থে একই সঙ্গে রাসায়নিক কীটনাশক ও ভেষজ কীটনাশক প্রয়োগ করে দেখা যায়, রাসায়নিক কীটনাশকের মতো ভেষজ কীটনাশক সম্পূর্ণ রূপে পোকা দমন না করলেও বাস্তবিক অর্থেই কার্যকরী।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে যেসব রাসায়নিক কীটনাশক পাওয়া যায় সেগুলোতে প্রায় শতভাগ পোকা মারা যেতে পারে। কিন্তু তাতে বাস্তুসংস্থানের একটি উপাদান পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে। তাই ভেষজ উপায়ে ফসল সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবেশও ঠিক থাকবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেলের অর্থায়নে, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। এছাড়া একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিমুল দাশ এবং সহকারী অধ্যাপক মো. মোস্তফা কামালও এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ছয় মাস মাঠ গবেষণার পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের অনুপাত যথাযথ আছে কি না তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, ভেষজ কীটনাশক প্রয়োগে ফসলের রাসায়নিক উপাদানের অনুপাতের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফলে পুষ্টিমানও বজায় থাকে।
গবেষকের দাবি, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে খুলনার ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বেগুন চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই এসব চাষাবাদে পোকা দমনে ভেষজ পদ্ধতি চালু হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও সারাদেশের কৃষিতে ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে।
এমআরআর/এএসএম