‘অসত্য তথ্যে’ ১৯ মাস বিদেশে চবি শিক্ষক, হতে পারে শাস্তি

ছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার নির্ধারিত সময়ের ছুটি শেষে কিংবা ডিগ্রি অর্জনের পরপরই নিয়ম রয়েছে কর্মস্থলে যোগদান করার। তবে এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষক। শিক্ষা ছুটির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডিগ্রি অর্জন করলেও তিনি ফেরেননি কর্মস্থলে।

অতিরিক্ত আরও এক বছর নিয়েছেন ‘অসাধারণ’ ছুটি। এই ‘অসাধারণ ছুটি’ শেষেও তিনি ফেরেননি কর্মস্থলে। ডিগ্রি অর্জনের পর প্রায় ১৯ মাস এবং ‘অসাধারণ ছুটি’র ছয় মাস শেষে তিনি ফিরেছেন নিজের কর্মস্থলে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অসত্য তথ্য’ দিয়েই তিনি এই অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি শিক্ষাছুটির বিধি পরিপন্থী। যদিও অসত্য তথ্য দিয়ে এই নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য এখনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষককে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা নেওয়া হয়েছে। তার ব্যাখ্যা সিন্ডিকেট বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেটই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যদিও এ ধরনের অসদাচরণের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার নজিরও রয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাসুদ আল কামাল। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজ বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি (পিএইচডি) করার জন্য ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নেন। তার ছুটির মেয়াদ ছিল চার বছর, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তিনি তার ডিগ্রি সম্পন্ন করে ফেলেন। পিএইচডি সনদে তার ডিগ্রি অর্জনের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

তবে এই ডিগ্রি অর্জনের ৪৫ দিন আগে ২০১৯ সালে ১৫ নভেম্বর ডিগ্রি অর্জিত হতে আরও এক বছর সময় লাগবে উল্লেখ করে ‘অসাধারণ ছুটি’ চেয়ে আবেদন করেন মাসুদ আল কামাল। তার আবেদনে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর সুপারিশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি পারিভন সুলতানা। শেষমেশ ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছর তাকে ‘অসাধারণ ছুটি’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে এই ছুটি শেষ হয়ে গেলেও চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেননি শিক্ষক মাসুদ আল কামাল। তিনি যোগদান করেন ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এ হিসেবে তিনি ডিগ্রি অর্জনের প্রায় ১৯ মাস এবং ‘অসাধারণ ছুটি’র ছয় মাস শেষে কর্মস্থলে ফেরেন।

এদিকে মাসুদ আল কামালের শিক্ষাছুটি বিধি পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি নজরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১৯ মাস বেশি ধরে বিদেশে অবস্থানের বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

ব্যাখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক মাসুদ আল কামাল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তার সন্তান হওয়াকে দেরির কারণ হিসেবে ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। তার বিষয়টি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’

তবে নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাসুদ আল কামালের ডিগ্রি অর্জিত হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে কিছু কিছু জেলা-উপজেলায় লকডাউন শুরু করে সরকার। অর্থাৎ মাসুদ আল কামালের ডিগ্রি দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার আরও তিন মাস আগেই শেষ হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চার দিন ধরে মাসুদ আল কামালের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সংযোগ মেলেনি। তার মোবাইল নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও মেলেনি সাড়া।

মিজানুর রহমান/এইচএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।