চারবার বিজ্ঞপ্তির পর ঢাবি প্রশাসন জানালো ‘শিক্ষক দরকার নেই’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড আবারও স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে চতুর্থবারের মতো বিভাগটির শিক্ষক নিয়োগ স্থগিতের ঘোষণা এলো। প্রতিবারই স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন ও দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ বোর্ড বাতিল করা হয়।
সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তির পর সেপ্টেম্বরে এক দফা নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হয়। পরে আবারও নিয়োগ বোর্ডের তারিখ ঘোষণা করে প্রশাসন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড ছিল। তবে তা গত ২১ নভেম্বর স্থগিত করেছে প্রশাসন।
এবার নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বর্তমানে ওই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। তাই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। যদি খুব বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে যথাসময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উর্দু বিভাগে সর্বশেষ প্রভাষক পদে নিয়োগ হয়েছিল ২০১৪ সালে। এরপর ২০১৬, ২০১৭ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে তা পরে স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিভাগটি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীদের নিয়োগ বোর্ড ছিল চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর।
তবে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে আবারও নিয়োগ বোর্ডের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল ২৫ নভেম্বর নিয়োগ বোর্ড হওয়ার কথা। তবে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় রোববার (২১ নভেম্বর) এ বোর্ড স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়।
উর্দু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) প্রভাষক পদে নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড হওয়ার কথা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনদিন আগে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করে। ফলে এবারও নিয়োগ বোর্ড বসছে না।
ঢাবির উর্দু বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। এ বিভাগে প্রতি বছর ১২০ জন করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের পাঠদানে রয়েছেন মাত্র নয়জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষকই উর্দু ভাষায় পাঠদানে অক্ষম বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘যে বিভাগের শিক্ষকরা ভালোভাবে উর্দু পাঠদান করাতে পারেন না, সে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষাভাষী হয়ে কীভাবে সিজিপিএ-৪-এ ৪ পায়? আমার মনে হয় পাকিস্তানের কোনো শিক্ষার্থীও উর্দু ভাষায় ১০০-তে ৮০ শতাংশ নম্বর পান না। তাহলে কীভাবে বাংলাভাষী শিক্ষার্থীরা ১০০ নম্বর পান এখানে?’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে তিনিসহ চারজন শিক্ষার্থী গণমাধ্যমে একটি লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সেখানে এ নিয়োগ বোর্ডে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুজন শিক্ষকের স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) তার এক আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাকে ফার্স্ট বানানোর জন্য বিভাগের কতিপয় শিক্ষককে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করেছেন। অন্যদিকে বিভাগীয় এক সরকারদলীয় শিক্ষক তার এক পছন্দের প্রার্থীকে শিক্ষক বানাতে ও তাকে প্রয়োজনীয় নম্বর পাইয়ে প্রথম বানিয়েছেন।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এখানে (উর্দু বিভাগে) কেউ ফার্স্ট হয় না। টার্গেট করে ফার্স্ট বানানো হয় এবং নিয়োগে কখনও অর্থের লেনদেন, স্বজনপ্রীতি, দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার দাপট প্রাধান্য পায়। শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।’
অভিযোগ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার কোনো ক্যান্ডিডেট (নিয়োগপ্রার্থী) নেই। প্রার্থীরা সবাই আমার শিক্ষার্থী। আমার কাছে সবাই সমান।’
উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের বিষয়ে জানিয়েছেন। এর বাইরে আমি নতুন কিছু জানি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি অনেক আগে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে কী লিখছে, আমি কিছুই জানি না। এসব বিভাগে শিক্ষক যে খুব দরকার এমন তো নয়। যখন দরকার হবে, তখন শিক্ষক নেবে।’
আল-সাদী ভূঁইয়া/এএএইচ/জিকেএস