প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছরে কতদূর এগোলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সালমান শাকিল
সালমান শাকিল সালমান শাকিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৪:১৭ এএম, ০৬ জুলাই ২০২১
ছবি: মোল্লা মোহাম্মদ সাঈদ

অডিও শুনুন

ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রথম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা পাওয়া রাবির ৬৮তম বছর পূর্ণ করছে আজ। তবে শিক্ষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সমাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সমাজের আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাবি।

এদিকে সিমাগো স্কপাস র‌্যাংকিংও বলছে, গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থানসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক অবস্থান নিম্নগামী।

সিমাগো স্কপাসের তথ্য মতে, সার্বিক অবস্থানে ২০১৭ সালে ৬৫০তম স্থানে থাকে। ১৪৮ ধাপ পিছিয়ে রয়েছে ৭৯৮তম স্থানে। গত তিন বছরে শুধু গবেষণায় পিছিয়েছে ৭ ধাপ। ২০১৭ সালে যেখানে গবেষণায় অবস্থান ছিল ৪১৬, তা দাঁড়িয়েছে ৪২৩তম স্থানে।

এছাড়া গত ৫ বছরের ব্যবধানে উদ্ভাবনে পিছিয়েছে ১২৮ ধাপ, আর সামাজিক অবস্থানে পিছিয়েছে প্রায় ৮ গুণ। যা ২০১৬ সালে সামাজিক অবস্থানে ৩০তম স্থানে থাকলেও ২০২১ এ ২১৭ ধাপ পিছিয়ে তা দাঁড়িয়েছে ২৪৭তম অবস্থানে।

বর্তমান অবস্থান ও পথচলা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে শিক্ষকরা বলছেন, প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। জ্ঞান সৃজন ও চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি নিম্নমুখী সে বিষয়টি তারাও স্বীকার করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিযোজন করার সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। যার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে, রাজনৈতিক ও দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ একটি বড় কারণ। এর কারণে একাডেমিক বা শিক্ষাউন্নয়নে সময়ের সঙ্গে চলতে তাদের এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একাডেমিক ও গবেষণা উন্নয়ন ব্যতিরেকে নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেশি প্রাধান্য পায়।’

অন্যদিকে মানসম্মত ফলাফল নিয়েও অনেকে শিক্ষক হতে পারেননি। শিক্ষক হওয়ার জন্য একাডেমিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার বিশেষ অনুপ্রেরণা না থাকলে সে শিক্ষক হিসেবে জাতিকে কিছু দিতে পারেন না। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া আন্তর্জাতিক মানসপন্ন শিক্ষার জন্য ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার মান উন্নয়ন দরকার। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দরকার। কিন্তু প্রথম দুর্বলতা হলো- শিক্ষার্থীদের অনেকে ভালো গবেষণা করছেন কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশের সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাচ্ছে না। এই তাবৎ বাস্তবতায় রাবির শিক্ষা গুরুত্বহীন অবস্থায় পড়ে গেছে। ঠিক এ কারণেই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অর্জনগুলো থাকার কথা ছিল সেগুলো সঠিকভাবে রাখতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রথম এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে শুরু থেকেই অনেক আশা আকাঙ্খা জড়িয়ে ছিল। তবে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে একাডেমিক ও অন্যান্য বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা বরাবরই নিম্নগামী। এর পেছেনে যে কারণগুলো দায়ী তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষক রাজনীতি। এ থেকে উত্তরণে রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক নিয়ে একটি ফয়সালায় আসা খুব প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই। রাজশাহীর বড় কুঠিতে মাত্র ১৬১ শিক্ষার্থী নিয়েই যাত্রা উত্তরাঞ্চলের প্রথম উচ্চ বিদ্যাপিঠটির। শুরুতে দর্শন, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, গণিত ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২টি অনুষদের অধীনে ৫৯টি বিভাগ। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৩১ জন।

এছাড়াও রয়েছে ৬টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৩টি একাডেমিক ভবন। ১৭টি আবাসিক হল, যার মধ্যে ১১টি ছাত্র ও ৬টি ছাত্রী হল এবং গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডরমিটরি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২০৫ জন।

সালমান শাকিল/এমআরআম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।