দীর্ঘ ছুটিতে মানসিক অবসাদে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ২৯ মে ২০২১

নাহিদ হাসান

• মানসিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা

• মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে পরিবারের সহায়তা বেশি প্রয়োজন

• অনলাইনে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ

• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে সহসাই এই অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করা হয় দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এক বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি। এদিকে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। অনেকেরই আচার-আচরণেও পরিলক্ষিত হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই মানসিক দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা।

তারা বলছেন, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ক্লাস করতেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িত রাখতে পারতেন। কিন্তু দীর্ঘ বন্ধে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। একাকিত্ব, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্তির কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এছাড়া দীর্ঘ এই বন্ধে সেশনজট, চাকরিতে প্রবেশ নানা বিষয় নিয়ে শঙ্কিত অনেক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেকেই টিউশনি, পার্টটাইম চাকরির উপায়ে আয় করতেন। সেগুলো বন্ধ হওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন অনেকেই।

এসব কারণে দুশ্চিন্তা, হতাশা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াসহ অনেক শিক্ষার্থীই বিপথগামী হচ্ছেন।

ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে ক্যাম্পাস বন্ধ হলে প্রথমদিকে বিষয়টি তাদের কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল। বিশেষ করে গ্রামে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে বেশ ভালো সময় কেটেছে তাদের। একটা সময় পরে ছুটির মেয়াদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে একঘেয়েমি ভাব এবং হতাশা।

রুবেল আহসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধের প্রথম কিছুদিন বেশ উপভোগ করেছিলাম। পরে ছুটি দীর্ঘ হতে থাকে। ঢাকায় থেকে টিউশন করিয়ে নিজের খরচ নিজেই চালাতাম। এখন সেটিও সম্ভব নয়। সেশনজটে পড়েছি, ঠিক কবে কলেজ খুলবে সেটিও অজানা। পরিবারের আর্থিক সমস্যা তো রয়েছেই। সবকিছু মিলিয়ে সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছা. আখতারা বানু বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যে মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভুগছে এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অনেক শিক্ষার্থী আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। এ হতাশা থেকে অনেকেই অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে।’
অনেক বাবা-মা অনলাইনে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। অভিভাবকদের এ আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে সন্তানদের সময় দিতে হবে।

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে শিফট করে সপ্তাহে দুই অথবা তিন দিন করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু সিনা সৈয়দ তারেক বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি একটা দুর্যোগ। বিগত কয়েক দশকে এমন দুর্যোগ আমাদের জীবনে আসেনি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ক্লাসে আসতে পারছে না। এই দীর্ঘ বিরতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘মেন্টাল ইলনেস’ তৈরি হয়েছে। এটা থেকে আবার 'রেসিডুয়াল ডেভিয়েন্স' তৈরি হচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’

এমন সময়ে পরিবার থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সাপোর্ট দেয়া বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের উন্নয়নসহ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে সহসাই এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

এসএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।